মা জীবিত, ছেলের দেহ ফিরল হুড়ার বাড়িতে, শোকাচ্ছন্ন পরিবেশে পৌঁছলো ক্ষতিপূরণ

ছেলের দেহ হাতে নিলেন ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মা। মর্মান্তিক এই ঘটনার সাক্ষী থাকল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক আধিকারিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিবেশীরা।

এক মাস আগেই স্ত্রী অর্চনা পাল হারিয়েছিলেন স্বামী শুকদেব পালকে। আর এবার ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ১০ বছরে ছেলে সুমনকেও। পুরুলিয়া জেলার হুড়া বাজার এলাকার ওই গৃহবধূর জীবনে এখন স্বামী ও ছেলে হারানোর মর্মান্তিক বেদনা শোকাচ্ছন্ন করে দিয়েছে।

ওড়িশার বালেশ্বরে রেল দুর্ঘটনায় পুরুলিয়ার ঠিক কতজন যাত্রী আহত এবং নিহত হন তা জেলা প্রশাসন জানাতে পারেনি। গোটা ব্যাপারটা ধোঁয়াশা রয়েছে প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে। নিহতদের মধ্যে হুড়ার দশ বছরের সুমন পাল, কেশরগড়ের বাসিন্দা সম্পর্কে সুমনের মামা সঞ্জয় কুম্ভকার রয়েছেন। সোমবার অর্চনা দেবীর বাড়িতে দুপুর একটা নাগাদ দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে দাদা সঞ্জয় কুম্ভকার ও ছেলে সুমন পালের দেহ আনা হয়। সকাল থেকে পাড়া-প্রতিবেশীদের ভিড় ছিল মৃত সুমন পালের বাড়িতে। জেলা প্রশাসনের কর্তারা বাড়িতে এসে রাজ্য সরকারের দেওয়া আর্থিক ক্ষতিপূরণের চেক অর্চনা দেবীর হাতে তুলে দেন। ততক্ষণে কান্নার রোল নেমে এসেছে ওই পরিবারে। অভিশপ্ত সেই ট্রেন দুর্ঘটনার নিজেই সাক্ষী থেকে অর্চনা দেবী হারালেন ছেলের সঙ্গে দাদা সঞ্জয় কুম্ভকারকেও।

স্বামীর মৃত্যুর পর নিজের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন ভেলোরে। সেখান থেকে ফেরার পথে ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দাদা সঞ্জয় ও ছেলে সুমনের সঙ্গে। তিনিও আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তারপরই সেখান থেকে প্রশাসনিক তৎপরতায় কোনওরকমে অর্চনা দেবী সশরীরে বাড়ি ফিরলেও প্রায় ৩ দিন পর ছেলের নিথর দেহ পৌঁছালো হুড়া বাজার এলাকার বাড়িতে। মৃত ছেলের নিথর দেহ এদিন বাড়িতে পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা সহ পরিবারের সদস্যরা। এদিন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে পুরুলিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) আদিত্য মোহন হিরানী সহ পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া ও রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক স্বপন বেলথরিয়া পৌঁছে যান।

অন্যদিকে, ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বান্দোয়ানের ঘাঘরা গ্রামের মতি লাল শবর ও জ্যোতি লাল শবরের বাড়িতে যান জেলা সভাধিপতি সুজয় ব্যানার্জি, জেলাশাসক রজত নন্দা, জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ ব্যানার্জি। নিহত বাকিদের দেহ সোমবার বিকেল পর্যন্ত বাড়িতে পৌঁছায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.