দু’বছরের লায়লার নিথর শরীরে অন্তিম মাতৃচুম্বন! ইজ়রায়েলি সেনার গুলিতে বিদ্ধ প্যালেস্টাইনি শৈশবও

যুদ্ধবিরতি চলাকালীন ফের প্যালেস্টাইনে হামলা ইজ়রায়েলের। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের জেনিনে ওই হামলায় প্রাণ হারাল লায়লা আল-খাতিব নামে বছর দুয়েকের এক শিশুকন্যা। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের উত্তরের শহর জেনিন। সেখানেই মিলেছে দু’বছরের লায়লার নিষ্প্রাণ দেহ। প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ইজ়রায়েলি সেনার গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে লায়লার ছোট্ট মাথা। হামলার পর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় প্যালেস্টাইনি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন লায়লার অন্তঃসত্ত্বা মা। ঘটনার পর জেনিনে লায়লার ছবি-সহ বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। বিশ্ব জুড়ে সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নেটাগরিকরা।

গত মঙ্গলবার ভোরে জেনিনে হামলা চালায় ইজ়রায়েলি বাহিনী। বেছে বেছে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলিকে নিশানা করা হয় বলে অভিযোগ। ইজ়রায়েলি স্নাইপারের গুলিতে মৃত্যু হয় ১৪ বছরের এক কিশোরের। সেই ‘অপারেশনে’ আরও অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত অনেকে। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের দাবি, লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খোঁজেই নাকি ওই অভিযান!

আয়লান কুর্দি। লাল টি-শার্ট আর নীল হাফ প্যান্ট পরা ফুটফুটে আয়লানের মুখ থুবড়ে বালির উপর পড়ে থাকার দৃশ্যের সামনে থমকে দাঁড়িয়েছিল সারা বিশ্ব। তার অপরাধ, ন’বছর আগের কোনও এক দিন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ফুঁসতে থাকা সমুদ্র পার হওয়ার চেষ্টা করেছিল তার পরিবার! তার পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এক সকালে তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে ভেসে এসেছিল বছর তিনেকের আয়লানের নিষ্প্রাণ দেহটা। তার পর ক’মাস এ নিয়ে কত শোরগোল, প্রতিবাদ! ক্রমে সে সব স্তিমিত হয়ে এসেছে অন্য সব ঘটনার মতোই।

আয়লান, তামিমি, লায়লা— ন’বছরেও যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিম এশিয়ায় থামেনি শিশুমৃত্যুর মিছিল। আল জ়াজ়িরার হিসাবে প্যালেস্টাইনে মৃতের সংখ্যা ৪৬,৭০৭। আহত প্রায় ৯০ হাজার। অন্যান্য সূত্রের মতে, নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই এক লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১৮ হাজারই শিশু। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইজ়রায়েল এবং হামাস। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন মঙ্গলবার জেরুজ়ালেম লাগোয়া ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ফের হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। আর ইজ়রায়েলি সেনার গুলিতে প্রাণ গিয়েছে আরও এক ফুটফুটে শিশুর।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তার প্রত্যুত্তরে গাজ়া ভূখণ্ডে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লাগাতার বোমাবর্ষণ করেছে ইজ়রায়েল। গাজ়া পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। হিসাব বলছে, ইজ়রায়েলি সেনার বোমা-গোলা-ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কয়েক কোটি টন কংক্রিট আর ইস্পাতের স্তূপ জমেছে গাজ়ায়। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪৬ হাজার প্যালেস্টাইনির। শেষমেশ কাতারের মধ্যস্থতায়, আমেরিকা এবং মিশরের চেষ্টায় গত ১৫ জানুয়ারি রাতে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইজ়রায়েল এবং হামাস। যুদ্ধবিরতির অন্যতম শর্ত হিসাবে শুরু হয়ে গিয়েছে বন্দি প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়াও। কিন্তু মৃত্যুমিছিল এখনও অব্যাহত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.