মেয়ে রয়েছে ভেন্টিলেশনে! বাঁকুড়ার হাসপাতালে মা নিজেকে শেষ করলেন গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে

জন্মের পর থেকেই গুরুতর অসুস্থ নিজের সদ্যোজাত সন্তান। এই পরিস্থিতিতে মানসিক অবসাদে হাসপাতালেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলেন মা! সোমবার সকালে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ওই মহিলার দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম পায়েল সিংহ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ ডিসেম্বর পুরুলিয়ার আদ্রা শহর সংলগ্ন বেঁকো গ্রামের বাসিন্দা পায়েলকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। ওই দিনই একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। জন্মের পরেই অসুস্থতার কারণে সদ্যোজাতকে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে ভেন্টিলেশনে রেখে তার চিকিৎসা চলছে। মৃতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সদ্যোজাতের শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন পায়েল। সোমবার সকালে পায়েল তাঁর মাকে হাসপাতালের বাইরে থেকে এক আত্মীয়াকে ডেকে আনতে বলেন। মা কিছু ক্ষণ পরে সেই আত্মীয়াকে ডেকে ওয়ার্ডে ফিরে এলে পায়েলকে আর নিজের বেডে দেখতে পাননি। এর পর হাসপাতালে খোঁজ শুরু হয়। ওয়ার্ডে বিষয়টি জানিয়ে মাইক প্রচারও করা হয়। পরে পরিবারের লোকজন দেখেন, হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের তিন তলায় সিঁড়িতে ওঠার শেষ ধাপে রেলিংয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় পড়ে রয়েছে পায়েলের নিথর দেহ। ঘটনা জানাজানি হতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাঁকুড়া সদর থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদের কারণেই পায়েল আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

এ দিকে হাসপাতালের ভিতরে পায়েলের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে স্বাভাবিক ভাবেই হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতালের জায়গায় জায়গায় নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রাখা ও সিসি ক্যামেরার নজরদারির পরেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রোগীর পরিজন। ঘটনা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। হাসপাতালের সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়কে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মৃতার স্বামী বিজয় সর্দার বলেন, ‘‘পায়েলের সঙ্গে কারও কোনও ঝগড়াঝাঁটি কিছুই হয়নি। তার পরেও কেন এমন ঘটনা ঘটাল, জানি না। প্রসবের পর থেকেই আমার স্ত্রী মানসিক অবসাদে ভুগছিল। সে কারণেই হয়তো এমনটা করে থাকতে পারে। হাসপাতালের নজরদারি থাকলে আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করতে পারত না।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.