ফ্যাশনজগতের মুকুটহীন সম্রাট জর্জিও আরমানি প্রয়াত হলেন। কিংবদন্তি পোশাকশিল্পীর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
ফ্যাশনের অনেক রকমফের হয়। তার মধ্যে একটি হল হাই ফ্যাশন বা ‘ওট কুচুয়র’। সহজ ভাষায় এর ব্যাখ্যা করতে বললে বলতে হয়, সেরার সেরা ফ্যাশন। যেখানে পোশাকের কাপড় থেকে শুরু করে সেই কাপড়ের নকশা, তার ফিটিং— সবই হতে হবে এক নম্বর বা সেরা। আরমানিকে সেই হাই ফ্যাশনের ‘সম্রাট’ বলে মনে করত ফ্যাশনজগৎ। তাঁকে বলা হত কিং জর্জিও।
তাঁর তৈরি করা পোশাক একটা সময়ে শুধুই সমাজের উঁচু স্তরে থাকা মানুষজন কিনে পরতে পারতেন। অথচ ইটালির এই পোশাকশিল্পী নিজে এসেছেন খুব সাধারণ পরিবার থেকে। কিছু বছর কাজ করেছেন সেনাবাহিনীতেও। তার পরে পদার্পণ করেন ফ্যাশনদুনিয়ায়। মিলানে একটি দোকানের কাচের জানলায় দাঁড় করানো ম্যানিকুইনকে পোশাক পরাতেন আরমানি। কে জানত সেই ছেলেটি এক দিন অর্বূদপতি হবেন। দখল করে নেবেন ফ্যাশনজগতের শীর্ষস্থানটি।

ফ্যাশনের ক্ষেত্রে প্যারিস যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্ব রয়েছে মিলানের। আরমানির উত্থান ইটালির সেই মিলান থেকেই। ইতালীয় পোশাকের কেতাদুরস্ততা এবং আভিজাত্য বরাবর নজর কেড়েছে শৌখিনীদের। আরমানি সেই আভিজাত্য এবং কেতাদুরস্ততাকে একটিই ক্যানভাসে বন্দি করার শিল্প আয়ত্ত করেছিলেন।
এই বিরল প্রতিভার গুণেই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা এক পোশাকশিল্পী ক্রমশ ফ্যাশনদুনিয়ায় জনপ্রিয় হতে শুরু করেন। তৈরি করেন নিজের ফ্যাশন সংস্থা। সেই পোশাকের সংস্থা একটা সময়ে বছরে ২০০ কোটি পাউন্ডেরও বেশি লাভ করতে শুরু করে। আরমানি নিজে ৫০০ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তির মালিক হন।
নিজের তৈরি করা পোশাকের ব্যাপারে তিনি শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন খুঁতখুঁতে। ২০২৪ সালেও নিজের সংস্থার আয়োজিত ফ্যাশনসপ্তাহে তাঁকে দেখা গিয়েছে মডেলদের পোশাক, তাঁদের চুলের সাজ ঠিক করে দিতে। হলিউডের অভিনেত্রীরা ছিলেন তাঁর ভক্ত। প্রতি বছরই তারকা অভিনেত্রীদের সঙ্গে নিয়ে র্যাম্পে হাঁটতে দেখা যেত তাঁকে। অসুস্থতার পরোয়া করতেন না। কিন্তু এ বছর জুনে আর পারলেন না।

বছরের শুরু থেকেই নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগছিলেন কিংবদন্তিপ্রতিম শিল্পী। জুন মাস নাগাদ সেই অসুস্থতা আরও বাড়ে। চিকিৎসা চলছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বয়সজনিত অসুস্থতার কাছেই হার মানলেন শিল্পী। রেখে গেলেন তাঁর বিশ্ববন্দিত কাজ।
আরমানির মৃত্যুতে তাঁর সংস্থার তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বলা হয়েছে, ‘‘মিস্টার আরমানির শেষমুহূর্তে তাঁর পাশে ছিলেন প্রিয়জনেরা। তিনি জীবনের শেষ কর্মঠ দিনটিও তাঁর প্রিয় ফ্যাশনের কাজ করেই কাটিয়েছেন। ওঁর চলে যাওয়ায় আমরা এক জন পথপ্রদর্শককে হারালাম।’’ আরমানির সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার এবং রবিবার আরমানির প্রিয় শহর মিলানেই তাঁর শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান হবে।