প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের রায় নিয়ে হাই কোর্টে প্রশ্ন তুললেন চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ। ওই রায় আইন-বহির্ভূত বলে সওয়াল তাঁদের আইনজীবীর। হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মানেননি বলে অভিযোগ তাঁদের। সোমবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, আগামী ১ জুলাই পরবর্তী শুনানি হবে।
ওই শিক্ষকদের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার হাই কোর্টে দাবি করেন, সিঙ্গল বেঞ্চ স্বাভাবিক ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করেছেন, একতরফা ভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন, সিবিআই তদন্তে অস্বচ্ছতা রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১২ মে প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছিলেন হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৪ সালের টেট থেকে মোট ৪২৫০০ জন শিক্ষক নিয়োগ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেখানে নিয়োগ পদ্ধতি মানা হয়নি অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পুরো প্যানেল থেকে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সে সময় ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য, পর্ষদ এবং চাকরিহারারা ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল। এর আগে পর্ষদ সওয়াল শেষ করেছে। সোমবার চাকরিহারাদের তরফে সওয়াল করা হয়। কল্যাণের বক্তব্য, চাকরিপ্রার্থীদের কোনও বক্তব্য না শুনে সিঙ্গল বেঞ্চ অবৈধ নিয়োগ চিহ্নিত করে দেয়। তার পরেই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি নিম্ন আদালতের মতো এজলাসেই সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। অথচ সেই সাক্ষীদের পাল্টা জেরা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তিনি জানান, একই মামলা বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ দীর্ঘসূত্রিতার কারণ দেখিয়ে খারিজ করে দেয়। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের সেই নির্দেশ মানেনি।
প্রাথমিকের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ পর্ষদ অস্বীকার করেছিল। এ বার চাকরিহারারাও একই দাবি তুললেন। তাঁদের আইনজীবী কল্যাণের দাবি, সিবিআই তদন্ত নিয়ে অস্বচ্ছতা রয়েছে। সিঙ্গল বেঞ্চ সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিলেও, সেই রিপোর্টে কী ছিল, তা কেউ জানেন না। সিবিআই তাঁদের কোনও মক্কেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। কেউ গ্রেফতার হননি। এমনকি, কারও বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগও আনেনি। তাঁদের মতে, শুধুমাত্র অনুমানের উপর নির্ভর করে সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি এত চাকরি বাতিল করে দিয়েছেন। এই মামলার শুনানি শেষ হয়নি। আরও অনেক পক্ষের সওয়াল এখনও বাকি রয়েছে।
২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন প্রায় এক লক্ষ ২৫ হাজার প্রার্থী। পর্ষদ ২০১৬ সাল থেকে তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। চাকরি দেওয়া হয় ৪২ হাজার ৯৪৯ জনকে। কিন্তু ওই নিয়োগে একাধিক ত্রুটির অভিযোগ করে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। তারই ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১৬ মে কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং চাকরিহারা শিক্ষকেরা। এর পরে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। তার পর সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়েছিল। যদিও শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চেই এই মামলা ফেরত পাঠায়।