ভোটার তালিকা নিয়ে অগস্টেই দেশজোড়া সমীক্ষা শুরু করতে চায় কমিশন! তবে নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের মামলার উপরে

অগস্ট মাস থেকেই দেশব্যাপী ভোটার তালিকা সংক্রান্ত সমীক্ষা শুরু করে দিতে চাইছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। ভোটার তালিকা নিয়ে বিহারে বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর) কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছে কমিশন। তা নিয়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। আগামী ২৮ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। ওই দিনই দেশব্যাপী সমীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে কমিশন।

বিহারের মতো বাকি রাজ্যগুলিতেও যে এই পদক্ষেপ করা হবে, তা আগেই জানিয়েছিল কমিশন। তবে কবে থেকে কমিশন সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়, তা এতদিন স্পষ্ট ছিল না। পিটিআই জানিয়েছে, আগামী মাস থেকেই সেই প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে উদ্যোগী হয়েছে কমিশন। সেইমতো বিভিন্ন রাজ্যে কমিশনের কর্মীদের সক্রিয়ও করা হচ্ছে।

কমিশনের এসআইআর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা চলছে। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র-সহ অনেকে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। মামলা করেছেন আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা এবং সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদবও। কমিশনের বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনীর কাজে গত শুনানিতে শীর্ষ আদালত কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। এরই মধ্যে বিহারের মতো অন্য রাজ্যগুলিতেও এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু করতে উদ্যোগী হল কমিশন।

সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বেশ কিছু রাজ্যে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শেষ এসআইআর-এর সময়ে প্রকাশিত ভোটার তালিকা প্রকাশ্যে আনা শুরু হয়েছে। দিল্লিতে শেষ এসআইআর হয়েছিল ২০০৮ সালে। সেই বছরের ভোটার তালিকা দিল্লির মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ্যে এসেছে। উত্তরাখণ্ডে ২০০৬ সালে শেষ এসআইআর হয়েছিল। ওই বছরের ভোটার তালিকা এখন সে রাজ্যে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও সব রাজ্যে বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা বা এসআইআর করার বিষয়ে এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। আগামী ২৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে শুনানির দিনই দেশব্যাপী এসআইআর-এর বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত পারে কমিশন।

চলতি বছরের শেষের দিকে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু এবং কেরলেও ভোট রয়েছে। সামনে এতগুলি নির্বাচনের মুখে কমিশনের বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার উদ্যোগ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ সেরে ফেলতে চায় কমিশন। বিহারের ভোটারদের মধ্যে নির্দিষ্ট ফর্ম বিলি করা হয়েছে। তা পূরণ করে নথি-সহ জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরে। নথি হিসাবে দেখাতে হবে নিজের এবং বাবা-মায়ের জন্মের শংসাপত্র। আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো নথি এ ক্ষেত্রে বিবেচিত হবে না। এতেই আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা। অভিযোগ, এর ফলে তিন কোটি মানুষ ভোটাধিকার হারাতে পারেন। যাঁরা এত দিন ধরে ভোট দিয়ে আসছেন, কেন আবার তাঁদের নথি দিয়ে ভোটাধিকার প্রমাণ করতে হবে, প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, ২০০৩-এর ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের সমস্যা নেই। কিন্তু বাকিদের মধ্যে যাঁদের জন্ম ১৯৮৭ সালের আগে, তাঁদের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। তাঁদের ক্ষেত্রে গ্রাহ্য মোট ১১টি নথির কথা জানিয়েছে কমিশন। তাঁরা গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকলেও এই নথি দিতে হবে। এ ছাড়া, ১৯৮৭ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজেদের এবং বাবা-মায়ের মধ্যে যে কোনও এক জনের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। ২০০৪-এর পরে জন্ম হলে নিজের ও বাবা-মায়ের দু’জনেরই জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে।

আপাতত কমিশনের কাজে সুপ্রিম কোর্ট কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। তবে আদালত জানিয়েছে, যদি ১ অগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়, তবে ২৮ জুলাইয়ের আগে শুনানির জন্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, আধার কার্ড, এপিক (ভোটার কার্ড) এবং রেশন কার্ড প্রয়োজনীয় নথি কি না, তা বিবেচনা করে দেখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.