৪০ ওভারের খেলা শেষ ২৯ ওভারে! অশ্বনীর বলে উড়ে গেল কলকাতা, চরম ব‍্যাটিং ব‍্যর্থতায় শাহরুখের শহরেই হার বাদশাহের কেকেআরের

আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সামনে পড়লেই কেঁপে যায় কলকাতা নাইট রাইডার্স।

সোমবার টসের সময় যে ভাবে অজিঙ্ক রাহানে বলেছিলেন যে, তিনি পিচের চরিত্র কেমন তা নিয়ে নিশ্চিত নন। অশনি সঙ্কেত দেখা গিয়েছিল তখনই। রাহানে মুম্বইয়ের ছেলে। সেখানেই তাঁর জন্ম। ওয়াংখেড়ে তাঁর ঘরের মাঠ। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি মুম্বইয়ের অধিনায়ক। সেই রাহানেই বলছেন ওয়াংখেড়ের পিচ বুঝতে পারেননি তিনি। তা হলে বাকি দল কী করে বুঝবে? ফল, ১১৬ রানে শেষ কলকাতার ইনিংস। মুম্বই জয়ের রান তুলে নেয় ৪৩ বল বাকি থাকতেই।

কেকেআরের অন্যতম মালিক শাহরুখ খান। বলিউডের ‘কিং খান’এর কর্ম জীবন মুম্বইয়ে। যে কারণে মুম্বই বনাম কলকাতা ম্যাচ শাহরুখের কাছে অনেকটাই সম্মানের লড়াই। সোমবার দল জেতার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে তিনি ওয়াংখেড়ে আসার কথা যে ভাবতেন না, তা হলপ করে বলা কঠিন। কিন্তু তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হল না।

দিনটা ছিল অভিষেককারী পেসার অশ্বনী কুমারের। আইপিএলের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথম বলেই তুলে নেন রাহানের উইকেট। যে রাহানে ওয়াংখেড়েতেই খেলে বড় হয়েছেন। ওয়াইড লেংথে বল ছিল। রাহানে শরীরের থেকে দূরে ব্যাট চালালেন। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ গেল তিলক বর্মার হাতে। প্রথমে ফস্কালেও দ্বিতীয় চেষ্টায় বল ধরেন তিনি। আইপিএলে জীবনের প্রথম বলেই উইকেট। তা-ও আবার বিপক্ষ দলের অধিনায়কের। কথায় বলে, সকাল বুঝিয়ে দিন কেমন যাবে। সেটাই হল। অশ্বনী তাঁর স্পেল শেষ করলেন ৩ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে। তুলে নিলেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে নামা মণীশ পাণ্ডে (১৯) এবং অভিজ্ঞ আন্দ্রে রাসেলের (৫) উইকেট। বাঁহাতি অশ্বনী কলকাতার অশনি সঙ্কেত হয়ে রইলেন।

শুরুটা করেছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন নিউ জ়িল্যান্ডের বাঁহাতি পেসার। বিভিন্ন দেশে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেন। তিনি প্রথম ওভারেই বোল্ড করেন সুনীল নারাইনকে (০)। পরের ওভারে দীপক চহর তুলে নেন কুইন্টন ডি’কককে (১)। তৃতীয় ওভারে আউট হন রাহানে (১১)। প্রতি ওভারে একটি করে উইকেট হারায় কলকাতা। কে ধরবেন আর কে রান তোলার চেষ্টা করবেন বুঝতে বুঝতেই চলে যায় চতুর্থ উইকেট। চহরের বলে অদ্ভুত ভাবে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দেন ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বেঙ্কটেশ আয়ার (৩)। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে কেকেআর তখন চরম সঙ্কটে। ত্রাতা হতে পারেননি অঙ্গকৃশ রঘুবংশী (২৬), রিঙ্কু সিংহ (১৭), রমনদীপ সিংহেরাও (২২)।

মুম্বই ছ’জন বোলারকে বল করায়। প্রত্যেকেই উইকেট পেয়েছেন। অশ্বনী একাই নেন চারটি। দু’টি উইকেট নেন চহর। একটি করে উইকেট নেন বোল্ট, হার্দিক পাণ্ড্য, বিগ্নেশ পুতুর এবং মিচেল স্যান্টনার।

প্রথম ইনিংসেই ম্যাচের ফল বোঝা হয়ে গিয়েছিল। ওয়াংখেড়ের মাঠে ১১৭ রান তাড়া করা খুব কঠিন নয়। আর দলে যদি রোহিত শর্মা (১৩), রায়ান রিকেলটন (৬২ রানে অপরাজিত), উইল জ্যাকস (১৬), সূর্যকুমার যাদবের (২৭ রানে অপরাজিত) মতো ক্রিকেটারেরা থাকেন, তা হলে তো আরও সহজ।

সোমবারের ম্যাচে কলকাতার পরিকল্পনার অভাব ছিল স্পষ্ট। রাহানে পিচ বুঝতে না পারায় দলে দু’জন পেসার রেখেই নেমেছিলেন। ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে মণীশ পাণ্ডেকে নামাতে হয় লজ্জা ঢাকতে। কিন্তু লজ্জা তো ঢাকেইনি, উল্টে এক জন বোলার কমে যায় কেকেআরের। কারণ মণীশকে নামানোর পরিকল্পনা ছিল না। বল করার সময় বৈভব আরোরাকে হয়তো নামাতো। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। ফল, এক জন পেসারের অভাব বোধ করল দল। মুম্বইয়ের পিচে কেকেআরের প্রধান শক্তি (স্পিন) সে ভাবে দাপট দেখাতে পারল না। নিজেদের শক্তি অনুযায়ী পিচ বানিয়ে সফল মুম্বই।

এ বারের আইপিএলে প্রথম তিন ম্যাচে দু’টি হার কেকেআরের। পরের ম্যাচ বৃহস্পতিবার। ঘরের মাঠে খেলবে কলকাতা। সেখানে কী পছন্দের পিচ পাবেন রাহানেরা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.