এই বিদ্যে নিয়ে শিক্ষকতা করবেন! চাকরিপ্রার্থীর ভুল বানান দেখেই আর্জি খারিজ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের

অযোগ্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিচারপতির দ্বারস্থ হয়েছিলেন নিজেকে ‘যোগ্য’ বলে দাবি করা এক চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু সেই প্রার্থীর ‘যোগ্যতা’র বহর দেখে বিস্মিত হলেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে শুনানি চলাকালীন কিছুটা বিরক্তিও শোনা গেল তাঁর কণ্ঠে। ভরা আদালতেই ওই চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার পরীক্ষা নেন বিচারপতি। উত্তর শোনামাত্র বলেন, ‘‘এই বিদ্যে নিয়ে আপনি স্কুলে শিক্ষকতা করতে যাবেন?’’ আপনার আবেদন খারিজ করতে বাধ্য হচ্ছি।’’

শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে একের পর এক মামলা চলছিল। নিয়োগ সংক্রান্ত এই মামলা ওঠার কিছু ক্ষণ আগেই রাজ্যকে অন্য একটি মামলায় ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানাও করেন রাজ্য সরকারকে। তার পরেই বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ শুনানির জন্য ওঠে ওই চাকরিপ্রার্থীর মামলা। আবেদনকারী একজন মহিলা। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থী। আদালতে তাঁর ইন্টারভিউয়ের ভিডিয়ো দেখানো হচ্ছিল। তার পরে বিচারপতির সঙ্গে তাঁর কথোপকথন ছিল—

ভিডিয়োয় দেখা যায় চাকরিপ্রার্থী ব্ল্যাক বোর্ডে লিখছেন, ‘‘আমরা চাষ করী আনন্দে।’’ স্কুলে শিক্ষকতার জন্য আবেদনকারীকে ‘করি’ বানানে দীর্ঘ-ঈ লিখতে দেখে অবাক হয়ে যান বিচারপতি।

আবেদনকারীকে বিচারপতি বলেন— আপনি শিক্ষক হবেন? ‘করি’ বানান ভুল! বলুন তো দুর্গা বানান কী?

চাকরিপ্রার্থী— (বানান করে বলেন) ‘দূর্গা’ ।

বিচারপতি— ভুল বললেন। ওটা ঠিক বানান নয়। বানান হবে ‘দুর্গা’। (বানান করে বলেন দ-এ হ্রস্ব-উ, গ-এ রেফ আকার।)

চাকরিপ্রার্থী— (চুপ করে থাকেন)

বিচারপতি— এই বানান না জানলে কী ভাবে শিক্ষক হবেন! করি বানান ভুল লিখলেন কী করে?

চাকরিপ্রার্থী— আমি নার্ভাস ছিলাম। তাই ভুল হয়েছে।

বিচারপতি— নার্ভাস হয়ে কেউ ‘করি’ বানান ভুল লেখে?

চাকরিপ্রার্থী— অনেক দিন আগে পড়েছিলাম তাই ভুলে গিয়েছি।

বিচারপতি— তা হলে আমি তো বহু বছর আগে পড়েছি। এই তো সে দিন আপনারা পড়ে এলেন। এরই মধ্যে ভুলে গেলেন। (সামান্য থেমে) আমি আর ভিডিয়ো দেখতে চাই না। আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে। আপনি পড়ানোর জন্য উপযুক্ত নন। আপনার আবেদন খারিজ করতে বাধ্য হলাম।

চাকরিপ্রার্থী— আবার চুপ

বিচারপতি— এই বিদ্যে নিয়ে আপনি স্কুলে যাবেন! যাবেন না। যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা হয়তো টাকার বিনিময়ে পেয়েছেন। কিন্তু আপনিও স্কুলে পড়ানোর যোগ্য নন।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই এই ঘটনার সূত্রপাত। ২০১৪ সালের ওই টেট পরীক্ষার্থী পাশ করতে পারেননি। বিচারপতির কাছে তাঁর দাবি ছিল, পরীক্ষায় ছ’টি প্রশ্ন ভুল ছিল। সেই নম্বর পেলে, তিনি চাকরি পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। গত ১৭ জুলাই ওই চাকরিপ্রার্থীর আবেদন শোনার পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, চাকরিপ্রার্থীকে তাঁর প্রাপ্য নম্বর দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, চাকরিপ্রার্থীর ইন্টারভিউ এবং অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট নতুন করে নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। শুক্রবার সেই মামলাটির দ্বিতীয় দফার শুনানি ছিল।

শুনানিতে বিচারপতিকে পর্ষদ জানায়, ওই চাকরিপ্রার্থী চাকরি পাওয়ার যোগ্য নয়। সে কথা শোনার পরই বিচারপতি নিজে তাঁর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি, ওই চাকরিপ্রার্থীর ইন্টারভিউ এবং অ্যাপ্টিটিউড টেস্টের ভিডিয়োগ্রাফিও দেখতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.