দেশের স্বার্থকে সুরক্ষিত রাখতে ভারত সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করবে। ভারতীয় পণ্যের উপর আমেরিকা ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোয় এ বার মুখ খুলল নয়াদিল্লি। বিবৃতি প্রকাশ করে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এই শুল্কের কী প্রভাব পড়তে পারে, তা খতিয়ে দেখছে ভারত সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রক ওই বিবৃতিতে জানিয়েছে, “দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে মন্তব্য করেছেন, তা সরকারের নজরে এসেছে। সরকার এর প্রভাব খতিয়ে দেখছে। একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ এবং দু’দেশই উপকৃত হবে এমন একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তির জন্য গত কয়েক মাস ধরে ভারত এবং আমেরিকা আলোচনা চালাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” বিবৃতিতে কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, কৃষক, উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের স্বার্থরক্ষা এবং তাঁদের উন্নয়নকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ওই বিবৃতিতে কেন্দ্র এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে, দেশের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করবে ভারত সরকার। উদাহরণ হিসাবে সম্প্রতি ব্রিটেনের সঙ্গে ভারতের মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির কথাও উল্লেখ করেছে কেন্দ্র। গত সপ্তাহেই ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তি সেরেছে ভারত। ওই চুক্তির ফলে ভারত এবং ব্রিটেন দু’দেশেরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
বুধবার বিকেলে (ভারতীয় সময় অনুসারে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেন। সমাজমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এর পাতায় এ বিষয়ে একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে ভারতকে ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ বলে উল্লেখ করলেও নয়াদিল্লি চড়া হারে শুল্ক নেয় বলে অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। তাঁর এই অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও বার বার ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
তবে এ বার রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ব্যবসা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। রাশিয়া থেকে ভারত অস্ত্র এবং জ্বালানি কিনছে, সে কথাও সমাজমাধ্যমে উল্লেখ করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্কের জন্য নয়াদিল্লির উপর ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি একটি ‘জরিমানা’ (পেনাল্টি) চাপানো হবে বলেও ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। তবে সেই জরিমানা কী হতে পারে, তা সমাজমাধ্যম পোস্টে উল্লেখ করেননি ট্রাম্প। ঘটনাচক্রে, কয়েক সপ্তাহ আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ইউক্রেনের উপর রাশিয়া হামলা বন্ধ না-করলে মস্কোর সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলির উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপাবেন তিনি
বস্তুত, গত এপ্রিলে ট্রাম্প যখন বিভিন্ন দেশের উপর পারস্পরিক শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তখন ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ শুল্কের কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। যদিও তা কার্যকর হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখেন ট্রাম্প। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে আলোচনাও শুরু করেন তিনি। ভারতের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। আগামী মাসে আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের ভারতে আসার কথাও রয়েছে। এরই মধ্যে ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ‘জরিমানা’ ঘোষণা করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। গত এপ্রিলে ঘোষিত শুল্ক থেকে এখন তা সামান্য কমলেও ‘জরিমানা’ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়া আমেরিকা থেকে আরও কম শুল্ক হার আশা করছিল ভারত। সম্প্রতি আমেরিকা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সঙ্গীর সঙ্গে চুক্তি সেরে নিয়েছে। সেখানে অনেক কম শুল্কের সুযোগ দিয়েছেন ট্রাম্প। যেমন, ব্রিটেনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে নিচ্ছে ১৫ শতাংশ। জাপান-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তিতেও টোকিওর পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রেও তেমনটাই সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছিল নয়াদিল্লি।