প্রতি বার খাওয়ার পরে ১০ মিনিট করে হাঁটা! তাতে ৭ রকম লাভ হতে পারে শরীরে

খাবার খাওয়ার পরে হাঁটা তো দূর ন্যূনতম চলাফেরাও হয় না অনেকের। বিশেষ করে দুপুরে এবং রাতে খাবার খাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে শুয়ে পড়াই সাধারণ অভ্যাস। তার বদলে যদি প্রতি বার খাবার খাওয়ার পরে ১০ মিনিট করে হাঁটা যায় তা হলে কী হয়?

এমস প্রশিক্ষিত লন্ডন নিবাসী এক ভারতীয় চিকিৎসক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট সৌরভ শেট্টী এ ব্যাপারে তাঁর মতামত জানিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিয়োয় চিকিৎসক বলছেন, ‘‘প্রতি বার খাওয়ার পরে যদি নিদেনপক্ষে ১০ মিনিট করেও সাধারণ ভাবে হাঁটা যায়, তবে ৭ রকম উপকার হতে পারে শরীরে।’’

১। রক্তে শর্করার মাত্রা ৩০ শতাংশ কমে

খাবার খাওয়ার পরে স্বাভাবিক নিয়মেই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে। হাঁটলে শরীরের বিভিন্ন পেশি সক্রিয় হয়। যার জন্য দরকার পড়ে গ্লুকোজ়ের। তাতে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত রক্তে শর্করা কমতে পারে।

২। ইনস্যুলিনের কাজ ভাল হয়

ইনস্যুলিন হরমোন রক্ত থেকে শর্করা বা গ্লুকোজ় সরিয়ে কোষের তন্তুতে পৌঁছে দেয়। ফলে রক্তে শর্করা বাড়তে পারে না। এই প্রক্রিয়াটি চালু রাখার জন্য ইনস্যুলিন হরমোনের কাজ যথাযথ ভাবে হওয়া জরুরি। খাবার পরে হাঁটলে বিপাকের হার ভাল থাকে। তাতে ইনস্যুলিনের কাজ ভাল হয়।

৩। হজম ভাল হয়

খাওয়ার পরে হাঁটলে পাচন প্রক্রিয়া আরও বেশি সক্রিয় হয়। পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে খাবার যাওয়ার যে প্রক্রিয়া, তারও গতি বাড়ে। এতে খাবার হজমের সুবিধা হয়। খাবার থেকে শরীর পুষ্টিও পায় দ্রুত।

৪। পেট ফাঁপার সমস্যা কমে

মেপে খাবার খাচ্ছেন বা হয়তো তেমন খাবার খাচ্ছেনই না। অথচ ভুঁড়ি কমছে না। তার কারণ হতে পারে ব্লোটিং বা পেট ফাঁপা। ব্যস্ত জীবনে খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম এবং বাইরের ভাজাভুজি খাওয়ার প্রবণতার কারণে ওই পেট ফাঁপার সমস্যা ইদানীং এতটাই বেড়েছে যে, বাজারে ব্লোটিং ফ্রেন্ডলি জিন্‌সও পাওয়া যাচ্ছে! চিকিৎসক বলছেন, খাওয়ার পরের ওই দশ মিনিটের হাঁটা গ্যাসের সমস্যা দূর করতে পারে। যা পেট ফাঁপার আসল কারণ।

৫। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কমে

খাবার খাওয়ার ঘণ্টা খানেক পরেই হালকা জ্বালা ভাব অনুভব করলেন গলার কাছে। আর সঙ্গে সঙ্গেই ভয়ে কাঁটা হয়ে শুরু হল অপেক্ষা। আবার কখন হবে? তবে কি আবার একই সমস্যা হবে। যাঁদের অ্যাসিড রিফ্লাক্সে ভুগতে হয়, তাঁরা জানেন এই আতঙ্ক কী রকম। খাওয়ার পরে ১০টি মিনিট হাঁটলে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন, জানাচ্ছেন চিকিৎসক।

৬। ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ঠিক থাকে

দুপুরে এবং রাতে এ দেশে সাধারণত বেশি খাবার এবং ভারী খাবার খাওয়া হয়। এই ধরনের খাবার শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। হাঁটলে খাবার থেকে শরীরে যাওয়া ফ্যাট ভেঙে শক্তি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়ে যায়। ফলে ট্রাইগ্লিসারাইড জমতে পারে না। জমে না কোলেস্টেরলও। হার্টের স্বাস্থ্যও ভাল থাকে।

৭। ঘুম ভাল হয়

রাতে খাবার পরে যদি ১০-১২ মিনিট হাঁটা যায়, তবে স্নায়ুকে শান্ত করতে এবং শিথিল করতে সাহায্য করে। একটি গবেষণার উল্লেখ করে চিকিৎসক বলেছেন, ‘‘যাঁরা প্রতি দিন খাওয়ার পরে হেঁটেছেন এবং সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত মিলিয়ে দৈনিক মোট ৭০০০ পা হাঁটতে পেরেছেন, তাঁদের ঘুম ভাল হয়েছে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া, ঘুম না আসার মতো সমস্যা কমেছে। ফলে তাঁদের শরীর বেশি বিশ্রাম পেয়েছে। যা সুস্বাস্থ্যের জন্য সবার আগে প্রয়োজন।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.