সৈকতের মিঠে রোদ আর খেজুরের রস! বড়দিনে দিঘা জমজমাট, অঘটন এড়াতে সজাগ প্রশাসনও

একে বড়দিন, তায় সৈকত-উৎসব ও ‘উইন্টার কার্নিভ্যাল’। তার সঙ্গে জুড়েছে শনি ও রবিবার, অর্থাৎ সপ্তাহান্তের ছুটিও। সব মিলিয়ে ২৫ ডিসেম্বরে থিকথিকে ভিড় উপচে পড়ল দিঘায়। যা অবস্থা, তাতে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সপ্তাহখানেক আগেও প্রায় ফাঁকা ছিল সৈকত শহর! পূর্ব মেদিনীপুরে উপকূলের অন্য পর্যটন কেন্দ্র মন্দারমণি, তাজপুরেরও ছবিটা একই।

শনিবার রাত থেকেই একে একে পর্যটকদের গাড়ি ঢুকতে থাকে সৈকত শহরে। কেউ এসেছেন সপরিবার ছুটি কাটাতে, তো কেউ পিকনিক করতে। রবিবারের মতো সোমবারেও শীতের আমেজ খানিকটা কম ছিল। মিঠে রোদ পোহাতে সৈকতের ধারে আড্ডা জমান পর্যটকেরা। শিউলিরাও খেজুর রসের হাঁড়ি নিয়ে হাজির সকাল থেকে। বেলা বাড়তেই কাতারে কাতারে মানুষ নেমে পড়েন সমুদ্রস্নানে। দিঘা হোটেল মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বড়দিনের ছুটিতে দিঘায় পর্যটকদের ঢল নেমেছে। অধিকাংশই পিকনিক করতে এসেছেন। হোটেলগুলিতেও যথেষ্ট ভিড় রয়েছে।’’ বিপ্রদাস জানান, এ বছর পুরো পুজোর ছুটির মরসুম দিঘার হোটেল মালিকদের হতাশ করেছে। একেবারেই ফাঁকা ছিল। কর্মচারীদের বেতন ও বোনাস দিতে গিয়ে বেজায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাদের। তবে, বড়দিনে অধিকাংশ হোটেলই বুকিং পেয়েছে বলেই জানিয়েছেন তিনি।

রবিবার দিঘায় বিচ ম্যারাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল জেলা পুলিশের সহায়তায়। প্রথম বার এই প্রতিযোগিতায় বিদেশিরা অংশগ্রহণ করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতিযোগিতায় যাঁরা জিতেছে, তাঁদের হাতে ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। বড়দিনে কুইজ় প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে দিঘায়।

উৎসবের আবহে অঘটন এড়াতে সজাগ প্রশাসনও। ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত স্নানঘাটগুলিকে দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। শীতের সময়ে অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকে দিঘার সমুদ্র। তাই সোমবার সকাল থেকেই ধুম পড়ে সমুদ্রস্নানের। পর্যটকরা যাতে কোমরজলে না নামেন, সে জন্য সৈকতে মাইকিং করতে থাকেন নুলিয়ারা। নুলিয়া, পুলিশের পাশাপাশি সিভিল ডিফেন্স কর্মীদেরও মোতায়েন রাখা হয়েছে সৈকতে। বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যটকদের সতর্ক করা হচ্ছে। চুরি, ছিনতাই এবং মহিলাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিপদগ্রস্ত মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘার উদয়পুর পর্যন্ত ‘উইনার্স টিম’ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। রবিবারের মতো সোমবারও সারা রাত ধরে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করছে জেলা পুলিশ।

নদিয়া থেকে আসা সোহম চক্রবর্তী জানান, বড়দিনে সৈকত-উৎসব ও উইন্টার কার্নিভ্যালের জন্যই দিঘায় এসেছেন। আবার রেলকর্মী সমীরণ সাহার কথায়, “এত ভিড় হবে ভাবিনি। তবে দিঘাকে নতুন চেহারায় খুব ভাল লাগছে। নিরাপত্তাও বেশ আঁটসাঁট। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিশ্চিন্তে বেড়াচ্ছি।” সৈকতের ঠিক পাশেই ফুচকা আর মশলা-মুড়ির দোকান নিমাই পণ্ডার। তিনি বলেন, “সন্ধের আগেই সব খাবার শেষ হয়ে যাবে মানে হচ্ছে। এত ভিড় হবে জানলে আরও বেশি করে জিনিস আনতাম।”

বর্ষশেষের উদ্‌যাপনেও তৈরি দিঘা। ইতিমধ্যেই রংবেরঙের আলোয় সেজে উঠেছে দিঘার বিভিন্ন হোটেল ও রাস্তাঘাট। বিপ্রদাস বলেন, ‘‘৩১ ডিসেম্বরের রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছে একাধিক হোটেল কর্তৃপক্ষ। আর দু-এক দিনে আরও লোক হবে বলে মনে হচ্ছে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.