ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলার শুনানি প্রায় এক মাস পিছিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতে এই মামলার সম্ভাব্য শুনানি দিন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর।
নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য ইতিমধ্যে জয়েন্ট এন্ট্রান্স নতুন মেধাতালিকা প্রকাশ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুন ওবিসি বিজ্ঞপ্তি মামলার সঙ্গে ওই আবেদনটিও জুড়ে দেওয়ার কথা ছিল। এখন সেটিও আর হচ্ছে না বলে মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরা মনে করছেন। তাঁদের কথায়, জয়েন্ট এন্ট্রান্স নিয়ে বিচারপতি কৌশিক চন্দের নির্দেশ আপাতত বহাল থাকল। বিচারপতি চন্দ জয়েন্ট নতুন প্যানেল প্রকাশের জন্য ১৫ দিন সময়সীমা বেঁধে হয়েছে। ওবিসি বিজ্ঞপ্তি মামলার শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার ফলে ওই আবেদনটির শুনানি নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকারের আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, জয়েন্ট এন্ট্রান্স নিয়ে আলাদা ভাবে শুনানির জন্য আবেদন করা হতে পারে। এ বার দেখার রাজ্য এই বিষয়ে দ্রুত শুনানি চেয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে কি না।
গত ২৮ জুলাই ওবিসি শংসাপত্রের বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। হাই কোর্টের ওই রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল শীর্ষ আদালতে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলারই শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
প্রসঙ্গত, গত বছর এপ্রিল মাসে ২০১০ সালের পরের সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দেয় হাই কোর্ট। বলা হয়, সামাজিক, আর্থিক এবং পেশাগত ভাবে সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমীক্ষা করতে হবে। তার পর নতুন করে ওবিসি তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। উল্লেখ্য, ২০১০-এর আগে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬৬টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে ধরা হত। ২০১০ সালে তৎকালীন বাম সরকারের আমলে ৪২টি এবং ২০১২ সালে তৃণমূল সরকারের আমলে আরও ৩৫টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে চিহ্নিত করা হয়। তাদেরকেই বাতিল করে দেয় উচ্চ আদালত। হাই কোর্ট আরও জানায়, ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত যে ৬৬টি জনগোষ্ঠী অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির অংশ ছিল কেবলমাত্র তাদেরই শংসাপত্র গ্রাহ্য হবে চাকরির নিয়োগ কিংবা কলেজে ভর্তিতে। ইতিমধ্যে রাজ্য একটি সমীক্ষা করে ওবিসি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তার বিরুদ্ধেই হাই কোর্টে মামলা হয় এবং সেটির উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় হাই কোর্ট। পরবর্তীতে হাই কোর্টের ওই নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। হাই কোর্টের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।
এর মাঝে আবার গত বৃহস্পতিবার রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের ফলপ্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওবিসি সংক্রান্ত জটিলতার জেরে সেই ফলপ্রকাশও আপাতত বিশ বাঁও জলে। যার জেরে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ। গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চ জয়েন্টের মেধাতালিকা বাতিল করার নির্দেশ দেন। নতুন করে মেধাতালিকা প্রকাশ করার জন্য বলা হয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডকে। আদালতের নির্দেশ, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র পড়ুয়াদের জন্য পূর্বের মতো ৭ শতাংশ সংরক্ষণই বরাদ্দ থাকবে। তা ছাড়া, নতুন ওবিসি তালিকা মেনে মেধাতালিকা প্রকাশ করা যাবে না। তালিকা প্রকাশ করলে তা করতে হবে পুরনো বিধি মেনে। অর্থাৎ, ২০১০ সালের আগের ৬৬টি ওবিসি সম্প্রদায়ের তালিকার ভিত্তিতেই নতুন মেধাতালিকা তৈরি করতে হবে। হাই কোর্টের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার।