হাতে চ্যানেল নিয়ে নাসার দফতরে সুনীতা, থাকতে হবে অন্তত ৪৫ দিন! কেমন আছেন? নিভৃতবাসের ঠিকানা কোথায়?

ন’মাস মহাকাশে আটকে ছিলেন। অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। মহাকাশে এই ন’মাস তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন বুচ উইলমোর। দুই নভশ্চরকেই আপাতত নিভৃতবাসে রাখা হবে। অন্তত ৪৫ দিন তাঁদের আলাদা করে রাখবে নাসা। তার পর শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুনীতাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বুধবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ফ্লরিডার সমুদ্রে অবতরণের পর সুনীতাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে টেক্সাসে। সেখানে হিউস্টনে নাসার জনসন স্পেস সেন্টার আগামী কয়েক দিনের জন্য সুনীতাদের নতুন ঠিকানা। আপাতত সেখানেই বিশ্রামে আছেন তাঁরা।

সুনীতা এবং বুচের সঙ্গে বুধবার মহাকাশ থেকে ফিরেছেন নাসার নিক হগ এবং রুশ নভশ্চর আলেকজ়ান্ডার গর্বুনভ। তাঁরা কিছু দিন আগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন। তাঁদের নিভৃতবাস এত দীর্ঘ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। আমেরিকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী, মঙ্গলবার অবতরণের পর রাত ১১টা ১৯ নাগাদ হিউস্টনে পৌঁছোন সুনীতা-সহ চার মহাকাশচারী। সেখানকার আধিকারিকেরা তাঁদের বরণ করে নেন। ওই সময়ের কিছু ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। তার একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, হাতে চ্যানেল করা আছে সুনীতার।

শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা

ন’মাস মহাকাশে কাটিয়ে আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার কথা সুনীতাদের। মহাকাশে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করে না। ওই আকর্ষণের বাইরে ২৮৬ দিন কাটিয়েছেন তাঁরা। ফলে তাঁদের শরীরের সমস্ত পেশি মাধ্যাকর্ষণে অনভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তা আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে। নরম হয়ে যেতে পারে সুনীতাদের শরীরের একাধিক হাড়। জিভেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। নাসার বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে তাঁদের চিকিৎসা শুরু করেছেন। পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কার কতটা সময় লাগবে, এখনও স্পষ্ট নয়। এই নিভৃতবাস পর্ব শেষ হলে পরিবারের কাছে ফিরতে পারবেন সুনীতারা।

নাসার সতর্কবাণী

দীর্ঘ দিন মহাকাশে আটকে থাকলে কী কী শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তা নিয়ে সতর্ক করেছে নাসা। বলা হয়েছে, এর ফলে যে কোনও মহাকাশচারীর মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত হতে পারে। তাঁর আচরণ পাল্টে যেতে পারে। অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং অবসাদ তাঁকে গ্রাস করতে পারে। এমনকি, দীর্ঘ দিন মহাকাশে থাকার ফলে মহাকাশচারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এই ধরনের সমস্যা এড়াতে মহাকাশে থাকাকালীন নিয়মিত কোনও না কোনও কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার পরামর্শ দিয়েছে নাসা। সুনীতাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়।

ট্রাম্পের বার্তা

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সুনীতাদের সেরে ওঠা খুব একটা সহজ হবে না। তাঁরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে যাবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। সুনীতাদের ফেরানোর বিষয়ে প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসার পর থেকেই তৎপরতা দেখিয়েছিলেন তিনি। ইলন মাস্ককে এই প্রত্যাবর্তনের বন্দোবস্ত করতে বলেছিলেন। ফ্লরিডায় স্পেসএক্সের যানের অবতরণের পর হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কথা দিয়েছিলেন। কথা রাখা হয়েছে।’’

কী ভাবে অবতরণ

ফ্লরিডার সমুদ্রে স্পেসএক্সের ড্রাগন যানের অবতরণের একাধিক ভিডিয়ো নাসা প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, আকাশের বুকে ছোট্ট একটি বিন্দু কী ভাবে ধীরে ধীরে বড় হয়েছে, নেমে গিয়েছে সমুদ্রের কোলে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে থাকাকালীন ড্রাগন যান থেকে একে একে চারটি প্যারাশুট খোলে। ভাসতে ভাসতে নিরাপদে অতলান্তিকে নামেন সুনীতারা। তাঁদের আনতে আগেই পৌঁছে গিয়েছিল মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ। সুনীতাদের ক্যাপসুল এসে জুড়ে যায় ওই জাহাজের সঙ্গে। তার পর মহাকাশচারীদের ক্যাপসুলকে হাইড্রলিক পদ্ধতিতে তোলা হয় জাহাজে। সেখানে ড্রাগন ক্যাপসুলের দরজা খোলে। ভারতীয় সময় বুধবার ভোর ৪টে ২২ মিনিট নাগাদ প্রথমে ক্যাপসুলের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন নিক হগ। তার পর একে একে নভশ্চর আলেকজ়ান্ডার গর্বুনভ, সুনীতা এবং বুচকে বার করে আনা হয়। স্ট্রেচারে চাপিয়ে তাঁদের জাহাজে তোলা হয়। ফ্লরিডা হয়ে বিমানে তাঁরা হিউস্টন পৌঁছোন।

ভারতে সুনীতা!

গুজরাতের মেহসানা জেলার ঝুলাসন গ্রামে সুনীতার পৈতৃক বাড়ি। তাঁর সফল অবতরণের পর থেকেই সেখানে খুশির হাওয়া। আতশবাজি ফাটিয়ে, নেচে, গেয়ে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উদ্‌যাপন করা হয়েছে। উচ্ছ্বসিত সুনীতার পরিবারও। আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে এ দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সুনীতার পরিবার জানিয়েছে, শীঘ্রই ভারতে আসবেন তিনি। সুনীতার ভ্রাতৃবধূ ফাল্গুনী পাণ্ড্যের কথায়, ‘‘এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না! ওর নামার মুহূর্তটি যেন অবাস্তব! এখনই সঠিক তারিখ বলতে পারব না, তবে খুব তাড়াতাড়িই ভারতে যাবে সুনীতা। ওর বাবা দীপক পাণ্ড্যের জন্ম ভারতের গুজরাতে। এ দেশের সঙ্গে তার নাড়ির যোগ রয়েছে।’’ ফাল্গুনী আরও জানিয়েছেন, সেরে ওঠার পর আপাতত পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটাবেন তিনি। ইতিমধ্যে একসঙ্গে ছুটি কাটাতে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, সুনীতাই প্রথম নভশ্চর, যিনি মহাকাশ স্টেশনে শিঙাড়া খেয়েছেন! তাই ভারতে ফিরলে তাঁর জন্য একটি ‘শিঙাড়া পার্টি’র আয়োজন করারও পরিকল্পনা সেরে ফেলেছেন পরিজনেরা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.