প্রত্যাবর্তনে গোল সুনীলের, মলদ্বীপকে ৩-০ হারাল ভারত, প্রথম জয় কোচ মানোলোর

ন’মাস পর অবসর ভেঙে আবার জাতীয় দলে ফিরেছেন সুনীল ছেত্রী। প্রত্যাবর্তনের মঞ্চে গোল করলেন তিনি। বুঝিয়ে দিলেন, কেন ভারতের হয়ে সর্বাধিক গোল তাঁর। বুঝিয়ে দিলেন, এখনও ফুটবল বাকি তাঁর মধ্যে। বুঝিয়ে দিলেন, কেন কোচ মানোলো মার্কেজ় তাঁকে ফেরার প্রস্তাব দিয়েছেন। মানোলো যে ভুল করেননি, তা দেখলেন ভারতীয় সমর্থকেরা। সুনীল ছাড়াও গোল করলেন রাহুল ভেকে ও লিস্টন কোলাসো। প্রীতি ম্যাচে মলদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারাল ভারত। জাতীয় দলের কোচ হওয়ার পর এই প্রথম জয়ের স্বাদ পেলেন মানোলো।

শিলংয়ের মাঠে খেলার শুরু থেকেই ভারতের আক্রমণ। দুই প্রান্ত ধরে লিস্টন কোলাসো ও মহেশ নাওরেম সিংহ আক্রমণে উঠছিলেন। ছোট ছোট পাসে খেলছিল ভারত। শুরুর কয়েক মিনিটেই কয়েক বার বল ভেসে আসে মলদ্বীপের বক্সে। কিন্তু গোল আসেনি। এই ম্যাচে শুরুতে সুনীলের জুটি ছিলেন ভালপুইয়া। ভাল দেখাচ্ছিল সুনীলকে। ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের (১২৬) থেকে ৩৬ ধাপ নীচে থাকা মলদ্বীপ (১৬২) গোটা প্রথমার্ধ জুড়ে রক্ষণাত্মক ফুটবলই খেলছিল। কিন্তু কত ক্ষণ আর সে ভাবে খেলা যায়। হলও তাই।

৩৫ মিনিটের মাথায় ব্রেন্ডন ফের্নান্দেসের কর্নার থেকে হেডে গোল করে ভারতকে এগিয়ে দেন রাহুল। এক গোল করার পরে আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় ভারত। ব্রেন্ডন চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় নামেন ফারুখ চৌধরী। প্রথমার্ধের শেষ দিকে তিনিও গোল করতে পারতেন। সুযোগ নষ্ট করেন ফারুখ। গোটা প্রথমার্ধে ভারতের বক্সে হাতে গোণা আক্রমণ করে মলদ্বীপ। সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে সমস্যা হয়নি শুভাশিস বসু, মেহতাব সিংহদের। এই ম্যাচে গোলের নীচে ছিলেন আইএসএলের সেরা গোলরক্ষক মোহনবাগানের বিশাল কাইথ। গোটা ম্যাচে তাঁকে তেমন কিছু করতেই হয়নি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পান ফারুখ। সহজ সুযোগ হারান তিনি। এই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করতে পারতেন তিনি। ফারুখের গতি রয়েছে। বলের নিয়ন্ত্রণও ভাল। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পড়েন তিনি। কোন বল মারবেন আর কোন বল পাস দেবেন, তা বুঝতে পারেন না। তিনি যদি সেটা ভাল করতে পারতেন, তা হলে সুনীল আরও আগে গোল করতে পারতেন। সুনীলের একটি হেড গোললাইন থেকে ফেরে। তবে যে ভাবে ভারত আক্রমণ করছিল, তাতে গোল আসা ছিল সময়ের অপেক্ষা।

৬৫ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন লিস্টন। তাঁর শট বাঁচান মলদ্বীপের গোলরক্ষক। কিন্তু তার পরেই কর্নার থেকে হেডে গোল করেন লিস্টন। ভারত ২-০ এগিয়ে গেলেও মাঠের দর্শকদের মন ভরছিল না। তাঁরা সুনীলের পা থেকে গোল দেখতে চাইছিলেন। ভক্তদের আশাহত করেননি সুনীল। ৭৬ মিনিটের মাথায় লিস্টনের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন সুনীল। তার পরে হাতজোড় করে এগিয়ে যান গ্যালারির দিকে। চোখ ছলছল করছিল তাঁর। বোঝা যাচ্ছিল, এই মুহূর্ত তাঁর কাছে কতটা আবেগের। ৮২ মিনিটের মাথায় সুনীলকে তুলে নেন কোচ। তিনি যখন মাঠ ছেড়ে বার হচ্ছেন, তখন দর্শকদের চিৎকারে মাঠে কানপাতা দায়।

বাকি সময়েও ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করে ভারত। মানোলোর পরিকল্পনা দেখে ভাল লাগল। এগিয়ে যাওয়ার পরেও খেলা মন্থর হতে দিলেন না তিনি। আগামী ২৫ মার্চ এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলবে ভারত। সেই ম্যাচের প্রস্তুতি ভাল ভাবে সারলেন সুনীলরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.