সুকান্তের গৃহপ্রবেশ যেন বঙ্গ রাজনীতির ‘প্রশিক্ষণ’ কেন্দ্র! প্রাক্তনের থেকে কি ‘টিপ্‌স’ পেলেন বর্তমান?

ছিল দিল্লিতে এক গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান। কিন্তু সেটাই হয়ে উঠল বঙ্গ রাজনীতির ‘গর্ভগৃহে’র দরজা খোলার ‘প্রশিক্ষণ শিবির’! আসরে হাজির অতিথি-অভ্যাগতেরা অন্তত তেমনই দাবি করছেন।

বঙ্গ রাজনীতির ‘গর্ভগৃহ’ যদি নবান্ন হয়, তা হলে গঙ্গার পশ্চিম কূলবর্তী সেই বহুতলের অধিশ্বরীর দাপটে নিরন্তর সচকিত থাকতে হচ্ছে পূর্ব কূলের এক প্রাসাদকে। সেই প্রাসাদের বর্তমান বাসিন্দা সিভি আনন্দ বোস ঠিক কতখানি ‘আনন্দে’ এই মুহূর্তে রয়েছেন, তা প্রাক্তন বাসিন্দা জগদীপ ধনখড়ের অজানা নয়। কারণ, নবান্নের সঙ্গে রাজভবনের নিরন্তর টানাপড়েনের সাক্ষী তিনি নিজেও দীর্ঘ দিন ছিলেন। তাঁর যাত্রাপথও আপাতদৃষ্টিতে খুব মসৃণ ছিল না। কিন্তু এ রাজ্যের রাজনৈতিক পর্ষবেক্ষকদের মতে, আনন্দ বোসের মতো পরিস্থিতিতে ধনখড়কে কখনও পড়তে হয়নি। এ তত্ত্ব যদি ঠিক হয়, তা হলে তার কারণগুলো কী কী, সে সব কথাই কি ধনখড় ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিলেন বোসকে? রাজধানীর নতুন বাংলোয় বাঙালি মন্ত্রীর গৃহপ্রবেশের আসরই কি সেই সুযোগ তৈরি করে দিল? নিমন্ত্রিতদের অনেকেই তেমন দাবি করছেন। যদিও আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।

২০১৯ সালে প্রথম বার বালুরঘাট থেকে জিতে লোকসভায় পৌঁছনোর পরে নয়াদিল্লির নর্থ অ্যাভিনিউতে সরকারি ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার। বছর দেড়েক পরে তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি হন। ১৭২, নর্থ অ্যাভিনিউয়ের অপরিসর ফ্ল্যাটে লোকজনের আনাগোনা অনেক বেড়ে যায়। তবু সুকান্ত সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন। ২০২৪ সালে আবার জেতেন এবং মন্ত্রিত্বও পান। তার পরেও নতুন আবাসস্থলের অপেক্ষা চলছিল। সম্প্রতি ৩০, এপিজে আবদুল কালাম রোডে সুকান্তের জন্য নতুন ঠিকানা বরাদ্দ হয়েছে। সেই বাংলোতেই গৃহপ্রবেশ ছিল শুক্রবার। সুকান্তের গৃহপ্রবেশে নিমন্ত্রিতের তালিকায় এ রাজ্যের বিজেপি নেতা-সাংসদরা তো ছিলেনই, ছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, এমনকি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। নিমন্ত্রিতের এই তালিকাই যেন ‘ত্র্যহস্পর্শ’ তৈরি করল। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের সভাপতির সঙ্গে বাংলার প্রাক্তন ও বর্তমান রাজ্যপাল। এবং তাঁদের মধ্যে নিবিড় আলাপচারিতার ছবিও।

সুকান্তের অনুষ্ঠানে শুক্রবার কেউকেটার সংখ্যা কম ছিল না। কিন্তু সুকান্তকে পাশে নিয়ে উপরাষ্ট্রপতি ধনখড় এবং রাজ্যপাল বোসের আলাপচারিতা আলাদা করে নজর কেড়েছে প্রায় প্রত্যেকের। কারণ, এই আলাপচারিতাকে সকলে নিখাদ প্রাক্তন আর বর্তমানের মধ্যে ‘সৌজন্যমূলক’ আলোচনা হিসেবে দেখছেন না। গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেরই বক্তব্য, ধনখড়ের কাছ থেকে ‘টিপ্‌স’ (পরামর্শ) পেয়ে থাকতে পারেন বোস। কারণ সুকান্তকে পাশে নিয়ে ধনখড় এবং বোসের মধ্যে আলাদা আলাপচারিতা শুক্রবার খুব ক্ষণস্থায়ী ছিল না। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে তাঁদের তিন জনের মধ্যে আলাদা করে কথোপকথন চলেছে।

রাজ্য বিজেপির অনেকেই রাজভবনের ধনখড় জমানাকে ‘মিস্‌’ করেন। রাজ্যপাল হিসেবে কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বা জগদীপ ধনখড় যে ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন, বোসের জমানায় তেমন ছবি দেখা যায় না বলে বিজেপির অনেকেই ‘আক্ষেপ’ করেন। শুধু বিজেপি নেতারা নন, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের অনেকেই তেমনটা মনে করেন। কোন কৌশল নিলে সেই আগের জমানা ফিরে আসা সম্ভব, সুকান্তের গৃহপ্রবেশের আসরে বোসকে কি তেমন কোনও প্যাঁচ-পয়জার বুঝিয়ে দিলেন ধনখড়? গৃহপ্রবেশে হাজির কেউ কেউ তেমনটাই মনে করছেন। তবে কেউ এ নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। এ নিয়ে কোনও কথা সুকান্ত নিজেও বলতে চাননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.