গত কয়েক দিন ধরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদে। বিশেষত সখমসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানে পরিস্থিতি মারাত্মক। বিজেপির দাবি, সেখানে এখন হিংসার পরিবেশ বিদ্যমান। যদিও পুলিশের দাবি, গত ৩৬ ঘন্টায় নতুন করে কোনো হিংসার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বহু আক্রান্ত মানুষ গঙ্গা পেরিয়ে ঠাঁই নিয়েছে মালদা জেলার আশ্রয় শিবিরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে চলছে আধা সেনা টহল। চলছে বিএসএফের নজরদারি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দু’দিনের সফরে মুর্শিদাবাদে গেছেন বিএসএফের স্ট্যান্ডিং কমান্ডার এডিজি। এই আবহে সোমবার মালদায় রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। রাজ্য সরকারকে জেহাদি সরকার বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ১০০টি দোষ মেনে নেওয়া হবে ১০১ নম্বরের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হিন্দুরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবে।

মুর্শিদাবাদের এই গন্ডগোলের পেছনে বাংলাদেশের দুই জঙ্গি গোষ্ঠী জামাত উল মুজাহিদ্দিন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মদত রয়েছে বলে নবান্নে রিপোর্ট পাঠিয়েছে রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তর। প্রায় একই রিপোর্ট বিএসএফের গোয়েন্দা বিভাগেরও। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের জঙ্গি গোষ্ঠী কিভাবে আমাদের রাজ্যে এতটা সক্রিয় হল, আগাম তার কোনো খবর রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ পেল না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আরো প্রশ্ন, সম্প্রতি মোথাবাড়িতে গোলমাল পাকানোর পিছনেও কি এই দুই গোষ্ঠীর হাত ছিল? যদি সেটাই হয়, তবে রাজ্যের পক্ষে তা উদ্বিগ্নের।
এই পরিস্থিতিতে মালদায় এসে রাজ্য সরকারকে তুলধনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। দলের মালদা জেলার সদর দপ্তরে নির্যাতিতদের জন্য বিশেষ কন্ট্রোল রুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। সুকান্ত মজুমদার বলেন, প্রথমে মোথাবাড়ি, তারপর ধুলিয়ান, একই ধরনের ঘটনা ঘটলো। আমি বলছি আরও অনেক জায়গায় এমন গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আক্রান্ত মানুষদের জন্য আমরা আগেই কন্ট্রোল রুম খুলেছিলাম। আজ তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। আমরা উপদ্রুত এবং সংলগ্ন এলাকায় কন্ট্রোল রুমের নম্বর জানিয়ে দিয়েছি এবং আগামীতেও জানাবো। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে মানুষ যাতে কন্ট্রোল রুমে জানাতে পারে তার জন্য এই উদ্যোগ।
তারপর এই রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করে সুকান্ত মজুমদার বলেন, এখানে যুদ্ধক্ষেত্রের মতোই পরিস্থিতি। যেখানে মহিলাদের বলা হচ্ছে ইজ্জত দাও তবে তোমার স্বামীর জীবন বাঁচবে, সেখানে যুদ্ধের থেকে কি ভালো পরিস্থিতি? এটা হিন্দু শূন্য করার যুদ্ধ। তবে আমরা লড়াই করে যাব। আবার বলছি, এখনো সময় আছে এসব বন্ধ করুন। তা না হলে ১০০টি দোষ পর্যন্ত ক্ষমা আছে, ১০১ নম্বর হলে আক্রান্ত হিন্দুরা আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে। রাজ্য প্রশাসনের সামর্থ না হলে আমরাও রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।
তিনি আরো বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌলতে যারা নিজেদের বাড়ি ঘরদোর ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে রয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য যারা চারদিনের সন্তান নিয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন তাদের সঙ্গে দেখা করব। আমি তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছি। আক্রান্তদের সঙ্গে বিজেপি রয়েছে।

পুলিশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঘটলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ নিজেরাই হিন্দুদের বাড়ি ভাঙ্গচুর করতে দেয়। আশাকরি এই ঘটনার পর পুলিশ আক্রান্তদের বাঁচানোর চেষ্টা করবে। তাঁর দাবি, মুর্শিদাবাদ এখনো পুরোপুরি শান্ত হয়নি, তার পরেও পুলিশ নির্লজ্জের মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করছে না। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের দায়িত্ব পুলিশ সুপারের, কিন্তু উপদ্রুত এলাকায় পুলিশ সুপার ও থানার আইসি বদমায়েশি করে। যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের প্রয়োজন, সেখানে তাদের নিয়োগ করছে না। আমার বিশ্বাস, বাংলার আক্রান্ত মানুষ এই পরিস্থিতি অনুধাবন করবে এবং বুঝতে পারবে। তাঁর অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ শুধু একটা ঝাঁকি মাত্র।
তাঁর দাবি, যখন দু’দিনের সফরে বিএসএফের স্ট্যান্ডিং কমান্ডার এডিজিকে ছুটে আসতে হয় তখন এই ঘটনার গুরুত্ব কতটা তা বোঝা যায়। বিএসএফের এত বড় বাহিনী, এডিজি আসা মানে তার কাছে নিশ্চিত ভাবে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে এখানে বড় কিছু হতে পারে। তাই সবাইকে বলব শান্তিরক্ষা করুন। তবে কিছু মানুষ রয়েছে যারা শান্তির মানে বোঝে না, তারা শুধু লাঠির ওষুধ বোঝে। এদের জন্য লাঠিও তৈরি করে রাখুন। কারণ বিএসএফের আসতে কিছুটা সময় লাগে। এই সময় নিজেদের বাঁচাতে তৈরি থাকুন। আর এদের জন্য লাঠি তৈরি রাখুন।ভারতবর্ষের সংবিধানে সবারই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি হিন্দুদের উপর অত্যাচার করবেন, আর সেটা আগাম জানিয়ে। আশা করবো, যাদের উপর অত্যাচার চালানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জিহাদি সরকারকে উৎখাত করতে যা করার তা করবেন।
সুকান্তবাবু জানান, মুর্শিদাবাদে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২৫০ পরিবার মালদায় আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন, পুলিশ, হঠাৎ করে তাদের বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হয়ে গিয়েছে। যেহেতু ঘটনা গোটা দেশের সামনে চলে এসেছে তাই উপর থেকে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আক্রান্তদের দ্রুত ঘরে ফেরাতে হবে। তাই পুলিশ ও প্রশাসনের চাপে অনেক পরিবার বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। তারপরেও এই মুহূর্তে ৭০ থেকে ৭৫টি পরিবার পরালালপুর স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে।