লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থীই শুধু পরীক্ষা দেবেন না রবিবার। পরীক্ষা স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এরও!
আগের, অর্থাৎ ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা ঘিরে বিস্তর দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। তাতে স্বাভাবিক ভাবে মুখ পুড়েছিল কমিশন এবং রাজ্য সরকারের। সুপ্রিম কোর্টেও ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল হয়ে গিয়েছে। তাতে চাকরি খুইয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। শীর্ষ আদালতেরই নির্দেশে সেই পরীক্ষাই আবার নতুন করে হতে চলেছে। রবিবার নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। তা যাতে নির্বিঘ্নে এবং সুষ্ঠু ভাবে হয়, নিশ্চিত করতে তটস্থ এসএসসি। সজাগ রাজ্য প্রশাসনও।
এসএসসির পরীক্ষা নিয়ে শনিবার বিকেল ৪টেয় জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। নবান্ন সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে প্রত্যেকটি জেলা প্রশাসনকে নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশিকা দিয়েছেন মুখ্যসচিব। তিনি বলেছেন, ‘‘এসএসসির গাইডলাইন মেনে পরীক্ষা করতে হবে। রাস্তায় থেকে প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে।’’ কোনও জেলায় কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, সে সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন মুখ্যসচিব। বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যান এবং স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরাও ছিলেন।
নবান্নের একটি সূত্রের দাবি, গত শুক্রবারও এ বিষয়ে একটি বৈঠক করেছিলেন পন্থ। সেই বৈঠকেও জেলাশাসকেরা ছিলেন। ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসনের অন্য আধিকারিকেরা। ওই সূত্রেরই দাবি, প্রতিটি জেলায় অতিরিক্ত জেলাশাসক পদমর্যাদার আধিকারিকদের পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটদের। পাশাপাশি, পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছোতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, পরিবহণ দফতরকেও বলা হয়েছে রাস্তায় বাসের সংখ্যা বাড়াতে। লোকাল ট্রেনের সংখ্যাও যাতে পর্যাপ্ত থাকে, তার জন্য রেলকেও অনুরোধ করা হয়েছে।
পরীক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়লে যাতে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন, তার জন্য কন্ট্রোল রুমও খুলবে এসএসসি। কমিশনের সদর দফতরের পাশাপাশি সব ক’টি আঞ্চলিক দফতরেও কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। এসএসসির কন্ট্রোল রুম খুলে যাবে সকাল ৮টা থেকে। রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফেও একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। সেটি খুলবে সকাল ১০টায়।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্স হ্যান্ডেলে পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শনিবার। তিনি লিখেছেন, পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারেন, সে জন্য প্রশাসন ৬৩৬টি কেন্দ্রে নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতা সুনিশ্চিত করতে তৎপর।

রবিবার নবম-দশমে নিয়োগের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩,১৯,৯১৯। মোট পরীক্ষাকেন্দ্র ৬৩৬। পরের রবিবার, অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর একাদশ-দ্বাদশে নিয়োগের পরীক্ষা। তাতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২,৪৬,৫০০। মোট পরীক্ষাকেন্দ্র ৪৭৮। এসএসসি জানিয়েছে, ২০১৬ সালে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলেই আবার আবেদন করেছেন। গত বারের চেয়ে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত আড়াই লক্ষ বেশি।
রবিবারের পরীক্ষা নিয়ে শনিবার সকালেই সাংবাদিক বৈঠক করেছেন এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। তিনি জানিয়েছেন, পরীক্ষা শুরু হবে দুপুর ১২টা থেকে। তার আগে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে প্রশ্নপত্র পৌঁছে যাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে। পরীক্ষার্থীরাও পরীক্ষাকেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে প্রবেশ করতে পারবেন। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের শেষ সময় বেলা ১১টা ৪৫। আর পরীক্ষাহলে প্রবেশের শেষ সময় দুপুর ১২টা। প্রশ্নপত্র বিতরণ শুরু হবে সকাল ১১টা ৪৫ থেকে। তখন শুধু নিজের নামটুকুই লিখতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। উত্তর লেখা শুরু করা যাবে দুপুর ১২টা থেকে।
চেয়ারম্যান জানিয়ে দিয়েছেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের দেহ তল্লাশি হবে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতে হবে এসএসসির ওয়েবসাইট থেকেই। নিজের সই করা পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। পরীক্ষাহলে কেউ ফোন নিয়ে যেতে পারবেন না। স্মার্ট ঘড়ি বা ক্যালকুলেটরও নিয়ে যাওয়া যাবে না। জলের বোতল আনলে তা স্বচ্ছ হতে হবে। হতে হবে স্বচ্ছ কলমও। তবে এসএসসি-ও পরীক্ষার্থীদের জন্য কলমের ব্যবস্থা করবে। অ্যাডমিট কার্ড বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি ফোল্ডারে নিয়ে গেলে, তা-ও স্বচ্ছ হতে হবে। বিশেষ ভাবে সক্ষমেরা আধ ঘণ্টা বেশি সময় পাবেন। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ হল থেকে বেরোতে পারবেন না।
কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, প্রশ্নপত্রও সুরক্ষিত। যদি কেউ বেআইনি ভাবে কিছু করার চেষ্টা করেন, আধঘণ্টার মধ্যে তিনি ধরা পড়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। তাঁর কথায়, ‘‘৩ লক্ষ ১৯ হাজার পরীক্ষার্থী কাল পরীক্ষা দেবে। প্রতিটি প্রশ্নপত্রের জন্য থাকছে আলাদা আলাদা সিকিউরিটি ফিচার। অ্যাডমিট কার্ড স্ক্যান করারও ব্যবস্থা থাকবে। সব পরীক্ষাকেন্দ্রই স্পর্শকাতর আমাদের কাছে। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ বেরোতে পারবেন না।’
২০১৬ সালের এসএসসির পরীক্ষায় ওএমআর শিট কারচুপির ঘটনা ঘটেছিল। তাই এ বার ওএমআর নিয়ে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে কমিশন। নতুন নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীরা ওএমআরের কার্বন কপি সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। প্যানেল এবং ওয়েটিং লিস্টের মেয়াদ থাকবে নিয়োগের প্রথম কাউন্সেলিংয়ের পরে এক বছর পর্যন্ত। তবে রাজ্য সরকারের আগাম অনুমতি নিয়ে তার মেয়াদ আরও ছ’মাস বৃদ্ধি করতে পারবে কমিশন। বিধিতে এ-ও বলা হয়েছে, প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে দু’বছর ওএমআর শিট সংরক্ষণ করা হবে। ওএমআর শিটের স্ক্যান করা প্রতিলিপি প্যানেলের মেয়াদ শেষের ১০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে।
এসএসসির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ওএমআর শিটে উত্তর ব্যতীত অন্য যে কোনও মন্তব্য বা ছবি আঁকা থাকলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে। পাশাপাশি, উত্তরপত্রে কোনও অশ্লীল মন্তব্য, নিষিদ্ধ ছবি, বা বিশেষ প্রতীক চিহ্ন থাকলে, তা বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এই কাজ সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার ঘরের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই করতে হবে। এমন ওএমআর শিট চিহ্নিত করে তা আলাদা খামে রাখতে হবে। প্রয়োজনে সেই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করবে কমিশন। পরীক্ষার কিছু দিন পরে ‘আনসার কি’ প্রকাশ করা হবে এসএসসির ওয়েবসাইটে। পরীক্ষার্থীরা কার্বন কপির উত্তরের সঙ্গে তা মিলিয়ে নিতে পারবেন।