এত চিঠি লেখেন, কেউ তামিলে সই করেন না! ভাষাযুদ্ধের আবহে স্ট্যালিনকে খোঁচা মোদীর

তামিলনাড়ুর নেতারা অনেকেই নাকি তাঁকে চিঠি লেখেন। অথচ এক জনও তামিল ভাষায় স্বাক্ষর করেন না! ভাষাযুদ্ধের আবহে এ বার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনকে কটাক্ষ করে এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

রবিবার তিন দিনের শ্রীলঙ্কা সফর শেষ করে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই রামেশ্বরম থেকে মণ্ডপম পর্যন্ত ২.০৭ কিলোমিটার দীর্ঘ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নতুন পমবন সেতুর উদ্বোধন করেন। তার পর রামনাথস্বামী মন্দিরে পুজোও দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও। সেখানেই স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান মোদী। তিনি বলেন, ‘‘তামিলনাড়ুর নেতাদের কাছ থেকে আমি বেশ কয়েকটি চিঠি পেয়েছি। তবে তার কোনওটিতেই তামিল ভাষায় স্বাক্ষর নেই! যদি আপনারা সত্যিই নিজেদের ভাষা নিয়ে গর্বিত হন, তা হলে অন্তত তামিল ভাষায় স্বাক্ষরটা করুন!’’ মোদী এ-ও বলেন, তামিল ভাষা এবং ঐতিহ্য যাতে বিশ্বের প্রতিটি কোণে পৌঁছোয় তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার নিরন্তর কাজ করে চলেছে। অথচ, তামিলনাড়ুর নেতারা চিঠির শেষে স্বাক্ষরটুকু পর্যন্ত তামিলে করেন না! এর পরেই তামিলনাড়ু সরকারকে মাতৃভাষায় মেডিক্যাল পাঠ্যক্রম চালু করার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, যাতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ছাত্রদের সুবিধা হয়। গত ১০ বছরে কেন্দ্রের উদ্যোগে তামিলনাড়ুতে ১১টি নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মোদী।

প্রসঙ্গত, রবিবার পমবন সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেননি স্ট্যালিন। গত বেশ কিছু মাস ধরেই স্ট্যালিনের নেতৃত্বাধীন ডিএমকে সরকার এবং কেন্দ্রের মধ্যে ভাষা নিয়ে চাপানউতর চলছে। সে রাজ্যের সরকারের দাবি, ‘তিন ভাষা নীতি’ প্রয়োগের মাধ্যমে হিন্দি শিক্ষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ তামিল ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর বলেও দাবি করেছে ডিএমকে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির অন্তর্গত তিন ভাষা নীতিতে বলা হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের তিনটি ভাষা বাধ্যতামূলক ভাবে শিখতে হবে— ইংরেজি, হিন্দি এবং স্থানীয় ভাষা। অথচ তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ রাজ্যেই দু’টি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক— ইংরেজি এবং স্থানীয় ভাষা। এর পরেই হিন্দি আগ্রাসনের অভিযোগে সরব হয়েছেন ডিএমকে নেতারা। দলের সাংসদেরা সংসদেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গোটা ‘ভাষাযুদ্ধ’ পর্বে ধারাবাহিক ভাবে সরব হতে দেখা গিয়েছে স্ট্যালিনকেও। এই প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই সুর মিলিয়েছে বিরোধী এডিএমকে এবং কমল হাসনের এমএনএম। অভিযোগ, তিন ভাষা নীতির বিরোধিতা করে জাতীয় শিক্ষা নীতি বলবৎ না-করায় শিক্ষা অভিযান খাতে দু’হাজার কোটি টাকার কেন্দ্রীয় বরাদ্দ থেকে তামিলনাড়ুকে বঞ্চিত করা হয়েছে। গত মাসেই বাজেটের লোগো থেকে ভারতীয় মুদ্রার প্রতীকচিহ্ন ‘রুপি’র বদলে তামিল শব্দ রুবাই-এর আদ্যক্ষর ‘রু’ বসিয়ে প্রতিবাদ জানায় তামিলনাড়ু সরকার। সে সব নিয়েই এ বার স্ট্যালিনকে খোঁচা প্রধানমন্ত্রীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.