আনিসিমোভাকে উড়িয়ে প্রথম বার উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন শিয়নটেক, ১১৪ বছরের পুরনো নজির ছুঁয়ে ট্রফি ইগার

শেষ বার কবে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে এমন একপেশে লড়াই হয়েছে তা রেকর্ডবুকে খুঁজতে গেলে মাথা চুলকোতে হবে। শনিবার মাত্র ৫৭ মিনিটের লড়াইয়ে ১৩ নম্বর আমেরিকার আমান্ডা আনিসিমোভাকে স্ট্রেট সেটে (৬-০, ৬-০) উড়িয়ে দিলেন অষ্টম বাছাই পোল্যান্ডের ইগা শিয়নটেক। শেষ বার ১৯১১ সালে উইম্বলডনে মহিলাদের সিঙ্গলস ফাইনালে ডরোথি ল্যাম্বার্ট চেম্বার্স ৬-০, ৬-০ হারিয়েছিলেন ডোরা বুথবিকে। ১১৪ বছর পর ঘাসের কোর্টে আবার সেই দৃশ্য় দেখা গেল। অবশ্য আরও এক বার গ্র্য়ান্ড স্ল্যাম ফাইনালে এই ঘটনা ঘটেছে। ১৯৮৮ সালে স্টেফি গ্রাফ ৬-০, ৬-০ হারিয়েছিলেন নাতাশা জ়েরেভাকে। তবে সেটা ফরাসি ওপেনের ফাইনালে। শনিবার উইম্বলডন ফাইনালে একটা গেমও জিততে পারলেন না আনিসিমোভা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হারতে হল তাঁকে। দর্শকেরাও এই ফাইনাল দেখে হতাশ। সেমিফাইনালে অঘটন না ঘটলে ফাইনালে শিয়নটেক বনাম সাবালেঙ্কার লড়াই হয়তো অনেক টান টান হত। তবে খুশি শিয়নটেক। প্রথম বার উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হলেন তিনি। কেরিয়ারে তাঁর ছ’নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন পোল্যান্ডের তারকা।

গত কয়েক বছরে মহিলাদের গ্র্যান্ড স্ল্যামের বেশির ভাগ ট্রফিই তিন তারকার মধ্যে ভাগ হয়েছে। শিয়নটেক ছাড়া তালিকায় রয়েছেন কোকো গফ ও এরিনা সাবালেঙ্কা। গফ এ বার প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছেন। বাকি ছিলেন সাবালেঙ্কা। তাঁকেও সেমিফাইনালে হারিয়ে চমক দিয়েছিলেন আনিসিমোভা। ফলে শিয়নটেকের সামনে লড়াই সহজ ছিল। ঠান্ডা মাথায় তা জিতে নিলেন তিনি। ২০২৪ সালে ফরাসি ওপেন জেতার পর চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যামে নেমে জিততে পারেননি তিনি। পছন্দের ফরাসি ওপেনও (ছ’টা গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে তাঁর চারটেই লাল সুরকির কোর্টে) এ বার হতাশ করেছে। অবশেষে ঘাসের কোর্টে হাসি ফিরল তাঁর মুখে।

ক্রমতালিকায় ১৩ নম্বরে থাকলেও কেরিয়ারে এই প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছিলেন আনিসিমোভা। সেমিফাইনালে যে ভাবে তিনি সাবালেঙ্কার পাওয়ার টেনিস সামলে জিতেছিলেন, তা নজর কেড়েছিল। ফাইনালেও তিনি অঘটন ঘটাতে পারেন কি না, সে দিকে নজর ছিল টেনিসপ্রেমীদের। পারলেন না আনিসিমোভা। হয়তো প্রথম বার ফাইনালের চাপ সামলাতে পারলেন না তিনি। নইলে সেমিফাইনালে যে খেলাটা খেলেছিলেন, তার ১০ শতাংশও এ দিন খেলতে পারেননি তিনি। তার খেসারত দিতে হল। ‘ডবল ব্যাগেল’-এ (টেনিসে ০-৬ হারলে তাকে বলা হয় সিঙ্গল ব্যাগেল। এ ক্ষেত্রে দুটো সেটে ০-৬ হওয়ায় ডবল ব্যাগেল) শিয়নটেকের কাছে হারলেন তিনি।

শিয়নটেক দেখেছিলেন, কী ভাবে সাবালেঙ্কার পাওয়ার টেনিস সামলেছেন আনিসিমোভা। তাই ফাইনালে তিনি পাওয়ার টেনিস খেলেননি। উল্টে শটে বৈচিত্র এনেছেন। আনিসিমোভাকে বুঝতে দেননি, কী শট খেলবেন। কোর্ট দৌড় করিয়ে ছেড়েছেন। নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন শিয়নটেক। ম্যাচের প্রথম গেমেই আনিসিমোভার সার্ভিস ভেঙে দেন শিয়নটেক। সেই শুরু। প্রথম ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়েন আনিসিমোভা। খেলা যত গড়াল তত ভুল করলেন তিনি। সেই ভুল কাজে লাগিয়ে এগিয়ে গেলেন পোল্যান্ডের তারকা।

শিয়নটেক নিজের প্রথম সার্ভিস কাজে লাগিয়েছেন। গোটা ম্যাচে তাঁর ৭৮ শতাংশ প্রথম সার্ভিস নির্ভুল হয়েছে। তার মধ্যে ৭২ শতাংশ সার্ভিসে পয়েন্ট তুলেছেন তিনি। এক বারও তাঁর সার্ভিস ভাঙার সুযোগ পাননি আনিসিমোভা। গোটা ম্যাচে মাত্র তিনটে ‘এস’ মেরেছেন শিয়নটেক। তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, জোরের বদলে নির্ভুল টেনিস খেলার চেষ্টা করেছেন তিনি। তাতে সফল শিয়নটেক। উল্টো দিকে সার্ভিস সমস্যায় ফেলেছে আনিসিমোভাকে। খুব খারাপ হয়েছে প্রথম সার্ভিস। দ্বিতীয় সার্ভিসের পরিসংখ্যানও ভাল নয়। তার ফলেই গোটা ম্যাচে ন’বার তাঁর সার্ভিস ভাঙার সুযোগ পেয়েছেন শিয়নটেক। ভেঙেছেন ছ’বার। আনিসিমোভার ২৮ আনফোর্সড এররও কাজে লাগিয়েছেন শিয়নটেক।

আনিসিমোভা (২৩) ও শিয়নটেকের (২৪) বয়সের ব্যবধান বেশি নয়। কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতার বিশাল পার্থক্য। কেরিয়ারে এর মধ্যেই ছ’টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলেছেন শিয়নটেক। ফাইনালে তাঁর রেকর্ড ১০০ শতাংশ। এক বারও রানার আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়নি। সেই অভিজ্ঞতায় চাপে পড়লেন আনিসিমোভা। প্রথম সেটের পর বোঝা যাচ্ছিল, মানসিক ভাবে খেলা থেকে হারিয়ে গিয়েছেন তিনি। হার মেনে নিয়েছেন। লড়াই তো দূর, লম্বা র‌্যালি খেলতেও পারলেন না। তাই শিয়নটেকের কাজটা আরও সহজ হয়ে গেল। চলতি বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.