শুভমনের প্রশংসা করতে গিয়ে লেগে গেল শাস্ত্রী-কার্তিকের, উঠল কেকেআর থেকে গিলকে ছাঁটাইয়ের প্রসঙ্গ

২৬৯ এবং ১৬১। একই টেস্টের দু’ইনিংসে এমন পারফরম্যান্সের পর ভারতীয় ক্রিকেট মহল বুঁদ হয়ে রয়েছে শুভমন গিলকে নিয়ে। ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী এজবাস্টনে শুভমনের ইনিংসকে তুলনা করেছেন ডন ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে। প্রশংসা করেছেন তাঁর নেতৃত্বের। একই সঙ্গে শুভমনের পক্ষ নিয়ে দু’কথা শুনিয়ে দিয়েছেন দীনেশ কার্তিককে। তাঁকেও পাল্টা শুনতে হয়েছে কার্তিকের কাছে। লেগে গিয়েছে দুই প্রাক্তনের।

ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ়ে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন শাস্ত্রী এবং কার্তিক। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর শুভমনকে নিয়ে শাস্ত্রীর উচ্ছ্বাস থামতেই চাইছিল না। তিনি বলেন, এজবাস্টনে দু’টি ইনিংসেই শুভমন ব্যাট করেছেন ব্র্যাডম্যানের মতো। ব্যাটার এবং অধিনায়ক শুভমনের জন্যই এ ভাবে ফিরে আসতে পেরেছে ভারত। অধিনায়ক শুভমনকেও ১০-এ ১০ দিয়েছেন তিনি। পরে শুভমনের সঙ্গে কথা বলার সময় শাস্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথম টেস্টে তোমার নেতৃত্ব ছিল একটু প্রতিক্রিয়াশীল। তুমি প্রতিটি বল দেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলে। দ্বিতীয় ম্যাচে বেশ সপ্রতিভ নেতৃত্ব দিলে। আকাশদীপকে খেলানো দুর্দান্ত সিদ্ধান্ত। ইংল্যান্ডের পরিবেশে আকাশদীপ নিশ্চিত ভাবে সেরা পছন্দ। দেখবে সিরিজ় যত এগোবে, আকাশদীপ ইংল্যান্ডকে তত ঝামেলায় ফেলবে।’’

অন্য দিকে শুভমনকে নিয়ে কার্তিক বলেন, ‘‘কেকেআর নেওয়ার পর শুভমনকে প্রথম দেখেছিলাম। ওপেনিং ব্যাটার হিসাবে ওকে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রথম তিন জনের মধ্যে রাখা যাচ্ছিল না। ছয় বা সাত নম্বরে ব্যাট করতে হচ্ছিল। ওই জায়গায় ওর মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। ধারাবাহিক ভাবে পারফর্ম করতে পারছিল না। দ্বিতীয় বছর আমাদের শুরুটা ভাল হয়নি। এক দিন আমার কাছে এসে বলেছিল, ‘ডিকে ভাই, মনে হয় আমি এ বার ওপেন করতে পারি।’ সুযোগ পেয়ে প্রথম ম্যাচেই বড় রান করেছিল।’’

কার্তিকের মুখে শুভমনের প্রশংসা শুনে খোঁচা দিতে ছাড়েননি শাস্ত্রী। শুভমনকে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে দু’কথা শুনিয়ে দিয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন অধিনায়ক কার্তিককে। তিনি বলেন, ‘‘যাই হোক, ডিকে অনেক কিছু বলল। শুভমনকে দিয়ে ওপেন করানোর কথা বলল। আর তার পর শুভমনকে কেকেআর থেকে ছেড়ে দিয়েছিল ডিকে।’’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে শুভমনের পারফরম্যান্স দেখে তাঁকে দলে নিয়েছিল কেকেআর। তখন আইপিএল বা টি-টোয়েন্টি ম্যাচের চাপ সামলানোর জন্য তৈরি ছিলেন না শুভমন। প্রতিভাবান উঠতি ক্রিকেটার হিসাবে ধরা হত তাঁকে। ২০২১ পর্যন্ত কেকেআরে ছিলেন শুভমন। সে সময় অধিনায়ক ছিলেন কার্তিক।

সহ-ধারাভাষ্যকারের খোঁচা শুনে চুপ থাকেননি কার্তিকও। পাল্টা কথা শুনিয়েছেন তিনিও। টেনে এনেছেন নিজের প্রসঙ্গ। ভারতীয় দলের কোচ থাকার সময় শাস্ত্রী তাঁকে কী ভাবে টেস্ট দল থেকে বাদ দিয়েছিলেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। ইংল্যান্ডের দুই প্রাক্তন অধিনায়ক মাইক আর্থারটন এবং নাসের হুসেনের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে কার্তিক কথাগুলি বলার সময় পাশেই বসেছিলেন শাস্ত্রী। প্রাক্তন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার বলেন, ‘‘আমার আর নাসেরের মধ্যে খুব বেশি মিল নেই। তবে বিষয়টা আমি ওভাবে দেখি না। নাসের লর্ডসে শেষ টেস্ট খেলেছিল। আমিও লর্ডসে শেষ টেস্ট খেলেছি। পার্থক্য হচ্ছে, নাসের কোচের ঘরে গিয়ে তাঁকে ডেকে বলেছিল, ওর টেস্টজীবন শেষ। আর আমার ঘরে কোচ নিজে এসে বলেছিলেন, ভাই তুমি আর পরের টেস্ট খেলার কথা ভেবো না। তোমার খেলা হয়ে গিয়েছে।’’ কার্তিকের কথায় স্বভাবতই খানিকটা অস্বস্তিতে পড়েন শাস্ত্রী। তবে ভারতের দুই প্রাক্তন ক্রিকেটারের বাগ্‌যুদ্ধ উপভোগ করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

২০১৮ সালে ভারতের টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছিলেন কার্তিক। অগস্টে লর্ডসে শেষ টেস্ট খেলেন তিনি। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতের কোচ ছিলেন শাস্ত্রী। তিনি দায়িত্ব থেকে চলে যাওয়ার পর আইপিএলের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ২০২২ সালে আবার ভারতীয় দলে ফেরেন কার্তিক। সে বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলেছিলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.