বলে শামি, ব‍্যাটে শুভমন! বাংলাদেশকে হারিয়ে শুরু ভারতের, চিন্তা থেকে গেল কোহলির ফর্ম নিয়ে

দুবাইয়ে ম্যাচের প্রথম ১০ ওভার দেখে মনে হয়েছিল, ম্যাচটি হয়তো একপেশে হবে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে ভারতের খামতিগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ২২৮ রান করে। তোহিদ হৃদয় শতরান করেন। ৬৮ রান করেন জাকের আলি। ভারতের হয়ে ৫ উইকেট নেন মহম্মদ শামি। বাংলাদেশের রান তাড়া করতে নেমে ভারত জিতল ৬ উইকেটে। চিন্তা রইল বিরাট কোহলির ফর্ম নিয়ে।

হৃদয়ের শতরান

পায়ে টান লেগেছিল বাংলাদেশি ব্যাটারের। সেই নিয়েই লড়লেন তোহিদ হৃদয়। যত ক্ষণ পেরেছেন ব্যাট করে গিয়েছেন। ১১৮ বলে তাঁর করা ১০০ রানের ইনিংসই বাংলাদেশকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দেয়। ছ’টি চার এবং দু’টি ছক্কা মারেন তোহিদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটাই প্রথম শতরান তাঁর। কিন্তু একটা সময় মনে হচ্ছিল তিনি আর ব্যাট করতে পারবেন না। মাঠের মধ্যেই শুয়ে পড়েছিলেন। ফিজিয়ো এসে তাঁকে সুস্থ করেন। খোঁড়াতে খোঁড়াতেই খেলতে থাকেন তোহিদ। দৌড়ে রান নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। তার পরেও মাঠ ছাড়েননি তিনি। শুরুর ধাক্কা সামলে ভারতীয় বোলারদের অনায়াসে খেললেন তোহিদ।

হৃদয়-জাকের জুটি

শুধু তোহিদ নন, বাংলাদেশের ইনিংস গড়ার নেপথ্যে ছিলেন জাকের আলিও। তোহিদ এবং জাকের মিলে ১৫৪ রানের জুটি গড়েন। তোহিদের শতরানের সঙ্গে জাকের করেন ৬৮ রান। ভারতীয় বোলারদের বিরুদ্ধে রান করেন তাঁরাই। জাডেজাদের বিরুদ্ধে যেমন রান করলেন তাঁরা, তেমনই সামলালেন শামিদের। শুরুতে যদিও বেশ সমস্যায় পড়ছিলেন। অক্ষর পটেলদের বল বুঝতে না পেরে সুইপ মারার চেষ্টা করছিলেন। ব্যর্থ হচ্ছিলেন বার বার। কিন্তু উইকেট দেননি। কয়েক বার সুযোগ দিলেও ভারত ব্যর্থ হয় তার সদ্ব্যবহার করতে। বাংলাদেশের ২২৮ রান তোলার কারিগর ছিলেন তাঁরাই।

ভারতের শোচনীয় ফিল্ডিং

ক্যাচ ফস্কানো শুরু করেছিলেন রোহিত। তিনি স্লিপে ক্যাচ ফেলেছিলেন। যে কারণে হ্যাটট্রিকের সুযোগ হারান অক্ষর। ক্ষমাও চেয়েছিলেন রোহিত। হার্দিক পাণ্ড্য ক্যাচ ফেলেছিলেন মিড অফে। স্টাম্প করার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেছিলেন লোকেশ রাহুল। রান আউট সুযোগ ফস্কেছিলেন শ্রেয়স আয়ার। ফিল্ডিংয়ে আরও বেশ কিছু ভুল করে ভারত। একের পর এক ভুলের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের তোহিদ হৃদয় এবং জাকের আলি ১৫৪ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। কিন্তু রোহিত ক্যাচ নিলে শূন্য রানে ফিরতে হত জাকেরকে। সেই তিনিই ১১৪ বলে ৬৮ রান করেন। হার্দিক ক্যাচ নিলে ২৩ রানেই শেষ হয়ে যেত তোহিদের ইনিংস। কিন্তু তিনি শেষ করেন ১০০ রানে। ভারতীয় ফিল্ডারেরা ভুলের খেসারত দিলেন গোটা ইনিংস।

শামির ৫ উইকেট

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ইংল্যান্ড সিরিজ়ে জাতীয় দলে চোট সারিয়ে ফিরেছিলেন শামি। সেখানে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, প্রতি ম্যাচে উন্নতি হচ্ছে তাঁর। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জসপ্রীত বুমরাহ না থাকায় ভারতের বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শামি। প্রথম ম্যাচে ভাল বল করলেন তিনি। প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকারকে আউট করেন তিনি। প্রথম স্পেলে মেহেদি হাসান মিরাজেরও উইকেট নেন শামি। তৃতীয় স্পেলে ফিরে এসে সেই শামিই আবার বাংলাদেশের জুটি ভাঙেন। জাকেরকে আউট করেন তিনি। নিজের নবম ওভারে আউট করেন তানজিম হাসান সাকিবকে। শেষ ওভারে নেন তাসকিন আহমেদের উইকেট। ম্যাচে ১০ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন শামি।

GFX

দুবাইয়ে মন্থর পিচ

দুবাইয়ের পিচ যথেষ্ট মন্থর। বল থমকে আসছে। ভারতীয় দল ব্যাট করার সময় বল ঠিক মতো ব্যাটে আসছিল না। খেলার সময় অসুবিধা হচ্ছিল শুভমন গিলদের। আগামী ম্যাচগুলিও ভারত এই মাঠেই খেলবে। যে কারণে সমস্যায় পড়তে পারেন রোহিতেরা। টস জিতে তিনি বলেছিলেন, দুবাইয়ে পরে ব্যাট করলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশ যদি ৩০০ রানের উপর লক্ষ্য দিত, তা হলে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হত ভারতীয় দলকে।

রান পেলেন না কোহলি

দুবাইয়ে রান তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মা এবং শুভমন গিল যতটা স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন, বিরাট কোহলিকে সেটা করতে দেখা গেল না। তিনি প্রথম থেকেই দেখে খেলছিলেন। দ্রুত রান তোলার চেষ্টাই করেননি তিনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ়ের শেষ ম্যাচে ৫২ রান করেছিলেন কোহলি। মনে করা হচ্ছিল তিনি হয়তো রানে ফিরেছেন। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে সেটা দেখা গেল না। ৩৮ বলে ২২ রান করলেন তিনি। একটি মাত্র চার মারেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোহলি রান না পেলে সমস্যা বাড়বে ভারতের।

শুভমনের শতরান

ভারতীয় দলের অন্যতম ভরসা এই মুহূর্তে শুভমন গিল। শতরান করলেন তিনি। ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত থেকে দলকে জেতালেন। ১২৫ বলে তাঁর করা শতরান যথেষ্ট মন্থর। কিন্তু এই ইনিংসটা প্রয়োজন ছিল। তিনি এক দিক ধরে রেখে রান না করলে ভারতীয় দল যথেষ্ট সমস্যায় পড়ত। তিনি শেষ পর্যন্ত ছিলেন বলে ভারত ২১ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.