মণিপুরে গত ১৩ মাসে হিংসাপর্বে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোমবার নর্থ ব্লকে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শাহ বলেন, ‘‘মণিপুরে জাতিগত বিভাজনের ইতি টানতে শীঘ্রই মেইতেই এবং কুকি দু’তরফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে কেন্দ্র।’’
মণিপুর সরকার গত সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যে পঞ্চায়েত, পুরসভা ও স্বশাসিত জেলা পরিষদের নির্বাচন করা হবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। স্বশাসিত জেলা পরিষদের ভোটের তারিখ হিল এরিয়া কমিটির সঙ্গে আলোচনার পরে ঠিক করা হবে। অবশ্য এখনও রাজ্যে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরছাড়া। ১০ হাজারের বেশি মানুষ ভিন্ রাজ্যে আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাঁরা লোকসভা ভোটে ভোট দিতেও পারেননি। কবে সকলে গ্রামে ফিরতে পারবেন তার ঠিক নেই। এই পরিস্থিতিতে তিন মাসের মধ্যে পঞ্চায়েত ও পুরভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
লোকসভা ভোটের সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপক হিংসা, বুথ দখলের খবর এসেছিল। তার পরেও বিজেপি ও তাদের শরিক এনপিএফকে চমকে দিয়ে দু’টি আসনই ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি পেয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ ভোট। এই পরিস্থিতিতে তাই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে গোলমাল আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
সালের ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল মণিপুরে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দেয়। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘাতের সূচনা হয়েছিল।
অশান্তি ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলসকে। তার পরেও হিংসা থামেনি। এখনও পর্যন্ত সে রাজ্যে নিহত প্রায় ২০০ জন। আহত হাজারের বেশি। বিতর্কের মুখে পড়ে অবশ্য মণিপুর হাই কোর্ট আগেই সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।