সোমবার শুরু মাধ্যমিক, সমস্যায় পড়লে কোন কোন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে পরীক্ষার্থীদের

এ বছরের মাধ্যমিক শুরু হচ্ছে সোমবার। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে একাধিক পদক্ষেপ করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে শুরু রাজ্য প্রশাসন। এক দিকে পর্ষদ এবং কলকাতা পুলিশের তরফে তাদের জন্য চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর। অন্য দিকে, পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে রাস্তায় নামানো হচ্ছে অতিরিক্ত সরকারি বাস। অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্রে তৈরি থাকছে হাসপাতালগুলিও।

পরীক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। যা সচল থাকবে ২৪ ঘণ্টাই। সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমে যে নম্বরগুলির মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে, সেগুলি হল— ০৩৩ ২৩২১ ৩৮১৩, ০৩৩ ২৩৫৯ ২২৭৭ এবং ০৩৩ ২৩৩৭ ২২৮২। পর্ষদের কন্ট্রোল রুমের কলকাতার আঞ্চলিক অফিসে ০৩৩ ২৩২১ ৩৮১১, বর্ধমানের আঞ্চলিক অফিসে ০৩৪ ২২৬৬ ২৩৭৭, মেদিনীপুরের আঞ্চলিক অফিসে ০৩২ ২২২৭ ৫৫২৪ এবং উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক অফিসে ০৩৫ ৩২৯৯ ৯৬৭৭ বা ৮২৪০৭৫৬৩৭১ নম্বরের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে। পরীক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকেরা সংশ্লিষ্ট নম্বরগুলিতে যোগাযোগ করে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সমস্ত সহযোগিতা পাবেন বলে জানিয়েছে পর্ষদ।

অন্য দিকে, কলকাতা পুলিশের তরফেও চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর। পরীক্ষার্থীরা যে কোনওরকম সমস্যার সম্মুখীন হলে পুলিশের সাহায্য নিতে পারবে ৯৪৩২৬১০০৩৯ নম্বরের মাধ্যমে।

একই ভাবে রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবনের তরফে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালকে ‘সিক বেড’ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার মাঝে অসুস্থ হলে তাদের সেখানে ভর্তি করানো যেতে পারে। এ ছাড়া, ব্লক সদর দফতরে অ্যাম্বুল্যান্স রাখার নির্দেশও দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।

অন্য দিকে, পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পরিষেবা দেবে রাজ্যের সরকারি বাসগুলি। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট থেকে দুপুর ২টো ৪৫ মিনিট পর্যন্ত কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম এবং ট্রাম সংস্থার বিভিন্ন বাস শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড থেকে চালানো হবে। যে সমস্ত রুটে যাত্রী সংখ্যা বেশি, সেখানে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট এবং ৯টা ১৫ মিনিট— এই দু’দফায় বাস ছাড়ার ব্যবস্থা থাকবে। অন্য জায়গায় বাস ছাড়বে সকাল ৯টায়। সংশ্লিষ্ট বাসগুলিতে ঝোলানো থাকবে ‘পরীক্ষা স্পেশ্যাল’ বোর্ড। বাসে অন্য যাত্রীরা উঠতে পারলেও অগ্রাধিকার পাবে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাই।

পরীক্ষার শেষেও যাতে পরীক্ষার্থীরা ঠিক ভাবে বাড়ি ফিরতে পারে তার জন্য দুপুর ২টো ১৫ মিনিট এবং দুপুর ২টো ৪৫ মিনিটে বিভিন্ন প্রান্তিক বাসস্ট্যান্ডগুলি থেকে ফের দু’দফায় বাস ছাড়বে। বাস চলবে সরশুনা, ঠাকুরপুকুর, হরিদেবপুর, যাদবপুর এবং ব্যারাকপুর থেকে হাওড়াগামী রুটে। এ ছাড়াও গড়িয়া থেকে দেশপ্রিয় পার্ক হয়ে ৫ নম্বর বাস এবং টালিগঞ্জ হয়ে ৭ নম্বর বাস হাওড়া অভিমুখে চালানো হবে। পাশাপাশি, বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে এসপ্লানেড এবং ডানলপ থেকে বালিগঞ্জের মধ্যেও বাস চলাচল করবে। অন্য দিকে, কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের তরফে দক্ষিণেশ্বর থেকে এসপ্লানেড, কুঁদঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর, কাঁকুড়গাছি থেকে বেহালা, নিউ টাউন থেকে শিয়ালদহ এবং দমদম বিমানবন্দর থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে বাস চালানো হবে।

এ ছাড়া, টালিগঞ্জ থেকে ঘটকপুকুর, হাওড়া স্টেশন থেকে খিদিরপুর হরিমোহন ঘোষ কলেজ এবং আমতলা, বারাসত থেকে আমতলা এবং ব্যারাকপুর, পার্ক সার্কাস থেকে ডানকুনি, বেলগাছিয়া থেকে বিবাদি বাগ-টিকিয়াপাড়া রুটে বাস চালাবে কলকাতা ট্রাম সংস্থা। একই সঙ্গে, শ্যামবাজার এবং গড়িয়াহাট থেকে এসপ্লানেড রুটে থাকছে ট্রাম পরিষেবা।

পরীক্ষার দিনগুলিতে বেসরকারি বাসের পরিষেবা ঠিক রাখার পাশাপাশি রাস্তায় যানজট নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ নজর দেবে প্রশাসন। সরকারি পরিবহণ নিগমের যে সব কর্মী বাস পরিষেবা সচল রাখার সঙ্গে যুক্ত, এই ক’দিন তাঁদেরও ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পরীক্ষা শুরুর ক’দিন আগেও যে পড়ুয়ারা মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড হাতে পায়নি, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তাদের জন্য পুনরায় পোর্টাল চালু করেছিল পর্ষদ। যেখানে শুক্রবার পর্যন্ত রাজ্যের ১৩৬টি স্কুলে থেকে ১৮১ জন পরীক্ষার্থীর জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। এর পর শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মধ্যশিক্ষা শিক্ষা পর্ষদের দফতরে তাদের মধ্যে ১০৬টি স্কুলের আধিকারিকেরা এসে ১৪১ জন পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে গিয়েছেন।

এর ফলে চলতি বছরের মোট মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে মোট ৯,৮৪, ৮৯৪ জন। যা গত বছরের থেকে ৬২ হাজারেরও বেশি। রাজ্য জুড়ে পরীক্ষা হবে মোট ২,৬৮৩টি পরীক্ষাকেন্দ্রে। ৪২৩ জন ‘কাস্টোডিয়ান’ থাকছেন। তাঁদের কাছে ইতিমধ্যেই প্রশ্নপত্র চলে গিয়েছে। মাধ্যমিকের প্রথম দিন প্রথম ভাষার পরীক্ষা। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে দেওয়া হবে প্রশ্ন। পরীক্ষা শুরু ১১টা থেকে। চলবে দুপুর ২টো পর্যন্ত। পরীক্ষার্থীরা তাদের জন্য নির্ধারিত পরীক্ষাকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই প্রবেশ করতে পারবে। গত বছরের মতো এ বছরেও কড়া নজরদারিতে পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। মোবাইল বা ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে পরীক্ষা হলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। গত বছর এই কারণে ১৪৫ জনের পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.