Sadarghat Mela: পয়লা মাঘের প্রাচীন এই মেলা আজও ডুবে আড়াই প্যাঁচের জিলিপির রসেই! সঙ্গে নদীবাতাস, মুরগি আর ঘুড়ি…

মাসকলাইয়ের জিলিপি আর শাঁকালু। এই দুটো জিনিস নিয়ে দারুণ জমে উঠেছে সদরঘাট মেলা। এই মেলা পূর্ব বর্ধমান জেলার বড় মেলাগুলির অন্যতম। শোনা যায়, বর্ধমানের মহারাজ এই মেলায় যেতেন, ঘুড়ি ওড়ানো উপভোগ করতেন। ঘুরে ঘুরে তিনি মেলা থেকে টুকিটাকি জিনিসপত্রও কিনতেন।

শীতের আবহে এই মেলার আকর্ষণ আজও একইরকম। বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে দামোদর নদের তীরে  প্রতিবছর ১ মাঘ এই মেলা বসে। কেউ একে বলেন ‘ঘুড়ির মেলা’, কেউ বলেন ‘জাতের মেলা, কেউ বলেন ‘সদরঘাটের মেলা’, কেউ বলেন ‘দক্ষিণ দামোদর মেলা’! কেউ আবার এই মেলাকে ‘শাঁকালুর মেলা’ বা ‘জিলিপির মেলা’ও বলেন। 

তবে শুধু শাঁকালু আর জিলিপিই নয়, এই মেলায় রয়েছে কুল, পেয়ারা ইত্যাদি ফল-সহ পাঁপড়ভাজা, ঘুগনি এবং আরও নানা রকম খাবার। রয়েছে মাটি, লোহা, কাপড়, প্লাস্টিকের তৈরি হাজারটা জিনিস।

তবে, এসবের মধ্যেও ‘স্টার’ কিন্তু আড়াই প্যাঁচের জিলিপই! এই মেলায় আড়াই প্যাঁচে ভাজা জিলিপির বিক্রি খুব বেশি। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, মাসকলাইয়ের দাম এখন খুব বেশি, তাই মূলত ময়দা মিশিয়েই আড়াই প্যাঁচে ডুবো তেলে ভাজা হয় এই জিলিপি। তারপর তা চিনির সিরায় সাঁতার কেটে আরো নধর হয়ে ওঠে। ক্রেতারাও জানাচ্ছেন, এই মেলায় আসা শাঁকালু আর জিলিপির টানে। তবে সঙ্গে অন্য জিনিসপত্রের কেনাকাটা তো আছেই।

শোনা যায়, প্রাচীন এই মেলা বসত দামোদর নদের দক্ষিণ পাড়ে পলিমপুর নামক গ্রামের নদীর তটে। পলিমপুর নামের একটি মহত্ত্ব আছে। ইতিহাস খুঁজলে দেখতে পাওয়া যায়, প্রাচীনকালে দামোদর নদের অববাহিকায় একজন মুসলিম সন্ত অর্থাৎ, একজন পির আস্তানা গেড়েছিলেন। জায়গাটি ছিল দামোদর নদের দক্ষিণ তীর। এই পিরের নাম ছিল হজরত শাহ পলেম। অনেকে বলেন, এই থেকেই ওপারের গ্রামটির নাম হয় ‘পলেমপুর’ বা ‘পলিমপুর’।

এই মেলায় এলাকার চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত শস্য ও সবজি যেমন, ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, শাঁকালু, শাক-সব্জি, গুড়, মিষ্টি আনতেন। অনেকেই এখানে গৃহস্থালির হরেক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন, মাটির হাঁড়ি, সরা, কুঁজো, কলসি ইত্যাদি বিক্রিবাটা করতেন। আরও প্রাচীনকালে মালের বদলে মাল বিনিময়ও চলত। আর এই মেলার একটা বিশেষত্ব হল মুরগি লড়াই।

এই মেলা এক সময়ে দামোদর অববাহিকার এপার-ওপার মিলিয়ে সমৃদ্ধ কৃষিবাণিজ্য ও লেনদেনের কেন্দ্র ছিল। তখন এপার আর ওপারে যাতায়াত ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। আগে, বারবার দামোদর নদে বন্যা হওয়ায় এলাকার মানুষের ভয়ংকর ক্ষতি হত। 

এখন বাস আর টোটো হরদম এপার-ওপার করে। মেলায় আগত মানুষজনদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। স্কুল-কলেজগুলিও এই মেলায় ছুটি থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.