চার বারের চ্যাম্পিয়ন শিয়নটেককে উড়িয়ে ফরাসি ওপেনের ফাইনালে সাবালেঙ্কা, অনামী বোয়াসঁর স্বপ্নের দৌড় থামালেন গফ

হারলেন ‘লাল সুরকির রানি’। ২৬ ম্যাচ পরে ফরাসি ওপেনে কোনও ম্যাচ হারলেন ইগা শিয়নটেক। কোয়ার্টার ফাইনালে পিছিয়ে থেকেও এলিনা রিবাকিনার বিরুদ্ধে ফিরেছিলেন শিয়নটেক। কিন্তু সেমিফাইনালে এরিনা সাবালেঙ্কার বিরুদ্ধে সেটা করতে পারেননি তিনি। শিয়নটেককে তাঁর পছন্দের কোর্টে হারালেন সাবালেঙ্কা। তিন সেটের লড়াই (৭-৬, ৪-৬, ৬-০) জিতলেন তিনি। তৃতীয় সেটে শিয়নটেককে দাঁড়াতে দেননি বিশ্বের এক নম্বর মহিলা টেনিস খেলোয়াড়। অপর সেমিফাইনাল জিতলেন দ্বিতীয় বাছাই কোকো গফ। এ বারের ফরাসি ওপেনের চমক ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ লস বোয়াসঁকে স্টেট সেটে (৬-১, ৬-২) হারিয়ে ফাইনালে উঠলেন আমেরিকার গফ। ফাইনালে লড়াই এক বনাম দুইয়ের।

এর আগে তিন বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন সাবালেঙ্কা। কিন্তু প্রথম বার হার্ড কোর্টের বাইরে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠলেন বেলারুসের তারকা। ২০২০ সালে প্রথম বার ফরাসি ওপেন জিতেছিলেন শিয়নটেক। ২০২২ থেকে পর পর তিন বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন পোল্যান্ডের তারকা। এ বার খুব একটা ছন্দে দেখাচ্ছিল না তাঁকে। জিতলেও সেই দাপট দেখাতে পারছিলেন না। গত ম্যাচে রিবাকিনার কাছে হারতে হারেত ফিরে আসেন। এই ম্যাচে পারলেন না। ২ ঘণ্টা ১৯ মিনিটের লড়াইয়ে হার মানলেন তিনি।

এই নিয়ে দ্বিতীয় বার দুই তারকার দেখা হল। এর আগে ২০২২ সালের ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে শিয়নটেকের কাছে হারতে হয়েছিল সাবালেঙ্কাকে। সেই হারের বদলা নিলেন সাবালেঙ্কা।

ফিলিপ শঁতিয়ে কোর্টে এই ম্যাচে ছাদ ঢাকা ছিল। প্যারিসে বৃষ্টি হওয়ায় ছাদ ঢেকে দেওয়া হয়। ফলে হাওয়ার কোনও প্রভাব পড়েনি খেলায়। প্রথম গেমেই শিয়নটেকের সার্ভিস ভাঙেন সাবালেঙ্কা। তৃতীয় গেমেও একই ছবি। ৩-০ এগিয়ে যান তিনি। দেখে মনে হচ্ছিল সহজেই হারবেন শিয়নটেক। কিন্তু তিনিও এই কোর্টকে হাতের তালুর মতো চেনেন। ফিরে আসেন শিয়নটেক। ৬-৫ থেকে সাবালেঙ্কার সার্ভিসে ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচান তিনি। সেই গেম জিতেও নেন। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে আবার দাপট দেখান সাবালেঙ্কা। তাঁর জোরালো সার্ভিসের সামনে দাঁড়াতে পারেননি শিয়নটেক। টাইব্রেকারে জিতে এগিয়ে যান সাবালেঙ্কা।

দ্বিতীয় সেটে আবার উল্টো ছবি। শুরুতেই সাবালেঙ্কার সার্ভিস ভাঙেন শিয়নটেক। পিছিয়ে পড়েন শীর্ষবাছাই। তৃতীয় গেমে আবার সাবালেঙ্কার সার্ভিস ভাঙেন শিয়নটেক। ফলে সেই সেটে আর ফিরতে পারেননি সাবালেঙ্কা। ৪-৬ সেট খোয়াতে হয় তাঁকে। সমতা ফিরিয়ে আশা জাগান শিয়নটেক। এ ভাবেই রিবাকিনার বিরুদ্ধে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু তৃতীয় সেটে বিস্ময়কর টেনিস খেললেন সাবালেঙ্কা।

মহিলাদের সার্কিটে সাবালেঙ্কার মতো ‘মুডি’ খেলোয়াড় খুব কম রয়েছে। তিনি ছন্দে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কঠিন। আবার অনেক সময় এত খারাপ খেলেন যে নিজেও অবাক হয়ে যান। তৃতীয় সেটে সেরা ফর্মের সাবালেঙ্কাকে দেখা গেল। একের পর এক উইনার মারলেন তিনি। একটা সময় শিয়নটেককে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, হার মেনে নিয়েছেন। তৃতীয় সেটে একটা গেমও জিততে পারলেন না শিয়নটেক। গোটা ম্যাচে ১০টা ব্রেক পয়েন্ট পেয়েছিলেন সাবালেঙ্কা। আটটা কাজে লাগান তিনি। সার্ভিস ধরে রাখতে না পারার খেসারত দিতে হয় শিয়নটেককে।

অপর সেমিফাইনালে ফরাসি বোয়াসঁর দিকে নজর ছিল সকলের। ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ হিসাবে ঢুকে কোয়ার্টার ফাইনালে তৃতীয় বাছাই জেসিকা পেগুলা ও সেমিফাইনালে ষষ্ঠ বাছাই মিরা আন্দ্রিভাকে হারিয়েছিলেন তিনি। সেমিফাইনালে অবশ্য গফের সামনে দাঁড়াতে পারলেন না বোয়াসঁ। মাত্র ১ ঘণ্টা ৯ মিনিটের লড়াই জিতে নিলেন গফ। নিজের দ্বিতীয় ফরাসি ওপেন ফাইনালে উঠলেন গফ।

সেমিফাইনালে গফের বিরুদ্ধে সার্ভিস ধরে রাখতে সমস্যায় পড়েন বোয়াসঁ। প্রথম সেটে মাত্র একটা সার্ভিস ধরে রাখতে পারেন তিনি। দ্বিতীয় সেটেও এক বারই নিজের সার্ভিস থেকে পয়েন্ট পেয়েছেন বোয়াসঁ। এক বার গফের সার্ভিস ভেঙেছেন তিনি। অন্য দিকে গোটা ম্যাচে বোয়াসঁর বিরুদ্ধে সাত বার সার্ভিস ভাঙার সুযোগ পেয়ে ছ’বার তা কাজে লাগান গফ। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, সেমিফাইনালের চাপ নিতে পারছেন না বোয়াসঁ। তাঁর মনঃসংযোগে সমস্যা হচ্ছিল। মাঝে মাঝে তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে নিজের মনঃসংযোগ ফেরানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু পারেননি। ম্যাচ হারলেও অবশ্য মন জিতেছেন ফরাসি খেলোয়াড়। তিনিই প্রথম যিনি ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ হিসাবে ঢুকে ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে খেললেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.