হারের ধাক্কা কাটিয়ে জয়ে ফিরল বেলজিয়াম, রোমানিয়া হারায় জমে গেল ইউরোর গ্রুপ ই-র লড়াই

জয়ে ফিরল বেলজিয়াম। রোমানিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝড় তুলল তারা। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে অন্তত হাফ ডজন গোল করতে পারত তারা। কিন্তু রোমেলু লুকাকুরা বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করলেন। ফলে ২-০ গোলেই সন্তুষ্ট থাকতে হল তাদের। ম্যাচ হারলেও খারাপ ফুটবল খেলেনি রোমানিয়া। তারাও বেশ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করেন। ৯০ মিনিট ধরে আক্রমণ প্রতি-আক্রমণের খেলা চলল। শেষ হাসি হাসল ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩ নম্বরে থাকা বেলজিয়াম।

এই ম্যাচের পরে জমে গেল গ্রুপ ই-র লড়াই। এই গ্রুপের চারটি দল, বেলজিয়াম, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া ও ইউক্রেনের পয়েন্ট ৩। সকলের দু’টি করে ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, এই গ্রুপ থেকে কোন দু’টি দল পরের রাউন্ডে যাবে তা ঠিক হবে শেষ ম্যাচে।

আগের ম্যাচে হারের ধাক্কা কাটাতে শুরুটা এমনই দরকার ছিল বেলজিয়ামের। খেলার ২ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে গেন ইউরি টিয়েলেম্যানস। আগের ম্যাচে তাঁকে পরিবর্ত হিসাবে নামিয়েছিলেন কোচ। এই ম্যাচে শুরু থেকে প্রথম একাদশে রাখেন। তার ফল মেলে। জেরেমি ডোকুর কাছে বক্সে বল রান রোমেলু লুকাকু। ডিফেন্ডারদের ঘাড়ের কাছে নিয়ে টিয়েলেম্যানসের কাছে বল বাড়ান তিনি। বক্সের বাইরে থেকে টিয়েলেম্যানসের ডান পায়ের শট বাঁচাতে পারেননি গোলরক্ষক।

২ মিনিট পরেই সমতা ফেরাতে পারত রোমানিয়া। বক্সের ভিতর থেকে ড্রাগুসিনের হেড ভাল বাঁচেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কাসটিলস। এগিয়ে যাওয়ার পরেও আক্রমণের ঝাঁঝ কমায়নি বেলজিয়াম। বাঁ প্রান্ত ধরে বার বার বক্সে ঢুকছিলেন ডোকু। তাঁর গতির সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না রোমানিয়ার ডিফেন্ডারেরা। কিন্তু ফাইনাল পাসে ভুল হচ্ছিল। ফলে গোল হচ্ছিল না।

১৪ মিনিটে গোল করার সুযোগ পান লুকাকু। ডোকুর থেকে বল পেয়ে শট মারেন তিনি। বল একটুর জন্য বাইরে যায়। রোমানিয়া পুরোপুরি প্রতি-আক্রমণে খেলছিল। মাঝে মধ্যে সুযোগ পাচ্ছিল তারা। কিন্তু আক্রমণে ফুটবলার কম থাকায় তা কাজে লাগছিল না।

প্রথমার্ধে আরও গোল করতে পারত বেলজিয়াম। ডোকু, কেভিন দ্য ব্রুইন, লুকাকু, লুকেবাকিয়ো, টিয়েলেম্যানসেরা বার বার গোলের কাছে পৌঁছন। মরিয়া ডিফেন্স করছিল রোমানিয়া। কয়েকটি ক্ষেত্রে ভাল বাঁচান রোমানিয়ার গোলরক্ষক নিতা। কয়েকটি ক্ষেত্রে স্বার্থপর ফুটবলের খেসারত দিতে হয় বেলজিয়ামকে। বক্সে ঠিক মতো পাস না দিয়ে একা একা গোল করার চেষ্টা করেন ডোকু, দ্য ব্রুইনেরা। ফলে গোল করতে পারেননি তাঁরা। ১-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় বেলজিয়াম।

দ্বিতীয়ার্ধে আরও ওপেন ফুটবল শুরু হয়। গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে রোমানিয়া। ফলে তাদের ডিফেন্স খুলতে শুরু করে। তাতে সুযোগ পায় বেলজিয়ামও। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১০ মিনিটে রোমানিয়া অন্তত তিন বার বেলজিয়ামের বক্সে ঢোকে। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারেনি তারা।

৬৪ মিনিটের মাথায় রোমানিয়ার রক্ষণের মাঝখান দিয়ে লুকাকুর দিকে বল বাড়ান টিয়েলেম্যানস। বাঁ পায়ের শটে ঠান্ডা মাথায় গোল দেন লুকাকু। কিন্তু ভার প্রযুক্তিতে দেখা যায়, লুকাকু অফসাইডে ছিলেন। আরও একটি গোল বাতিল হয় বেলজিয়ামের স্ট্রাইকারের।

৭০ মিনিটের মাথায় ম্যাচের সবচেয়ে ভাল সুযোগ পেয়েছিল রোমানিয়া। হাজি বক্সে ঢুকে সতীর্থকে পাস বাড়াতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিজে শট মারার চেষ্টা করেন। গোলরক্ষক কাসটিলস বাঁচিয়ে দেন। সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হয় রোমানিয়াকে। ৮০ মিনিটের মাথায় নিজের দলের গোলরক্ষকের লম্বা বল ধরে রোমানিয়ার বক্সে ঢুকে চলতি বলে শট মেরে গোল করেন দ্য ব্রুইন। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত খেললেন দ্য ব্রুইন। গোল করলেন। গোলের সুযোগ তৈরি করলেন। দ্য ব্রুইন বুঝিয়ে দিলেন এই দলের চালিকাশক্তি তিনিই।

৮২ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়াতে পারত বেলজিয়াম। বক্সে ভাল বল পান ট্রসার্ড। কিন্তু গোল করতে পারেননি তিনি। আরও সুযোগ পান লুকাকু। কিন্তু গোল হয়তো তাঁর ভাগ্যে লেখা ছিল না। নইলে যে সব সহজ সুযোগ তিনি নষ্ট করলেন তা তাঁর মতো ফুটবলারের কাছে আশা করা যায় না। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে জিতেই মাঠ ছাড়ল বেলজিয়াম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.