দিনের শুরুতে রোহিতের জোড়া ভুল, দিনের শেষে কোহলিদের ব্যর্থতা, দ্বিতীয় টেস্টে ‘ব্যাকফুট’-এ ভারত

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দিন-রাতের টেস্টে প্রথম দিনের শেষেই চাপে ছিল ভারতীয় দল। দ্বিতীয় দিনের শেষে সেই চাপ আরও বৃদ্ধি পেল। রোহিত শর্মার নেতৃত্বের একাধিক ভুল, খারাপ ফিল্ডিং এবং ব্যাটিং ব্যর্থতায় দিশেহারা ভারতীয় দলের সাজঘর। গোলাপি বলের টেস্ট জিতে পাঁচ টেস্টের সিরিজ়ে সমতা ফেরানো প্যাট কামিন্সদের কাছে সময়ের অপেক্ষা।

শুক্রবার দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে রান ছিল ১ উইকেটে ৮৬। ২২ গজে ছিলেন মাথান ম্যাকসুইনি এবং মার্নাস লাবুশেন। ৯৪ রানে এগিয়ে থাকা ভারতের লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল আগ্রাসী বোলিং করে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে রাখা। অথচ শনিবার শুরুতে যশপ্রীত বুমরাকে মাত্র চার ওভার ব্যবহার করলেন রোহিত। সম্ভবত পায়ে চোট পাওয়ায় বুমরাকে সে সময় আক্রমণ থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন রোহিত। পরে অবশ্য চেনা ছন্দেই বল করেছেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেও আক্রমণে আনলেন দিনের ১৫তম ওভারে। দলের একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনারকে আরও আগে আনতে পারতেন রোহিত। কারণ আগের দিনই ৩৩ ওভার ব্যাট করেছে অস্ট্রেলিয়া। বল যথেষ্ট পুরনোও হয়ে গিয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের সহজে রান তোলার অন্যতম কারণ ভারতীয় দলের খারাপ ফিল্ডিং। উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থও এই ম্যাচে সেরা ফর্মে নেই। উইকেটের পিছনে একাধিক ক্যাচ ফস্কাল ভারত। রানও গলল অহরহ। সাধারণ ফিল্ডিংও প্রত্যাশিত মানের হল না ভারতের। হর্ষিত রানা, মহম্মদ সিরাজেরাও (পরের দিকে ৪ উইকেট পেলেও) অ্যাডিলেডের ২২ গজকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলেন। অস্ট্রেলিয়ার গোটা ইনিংসেই ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা গিয়েছে। কখনও কখনও দিশাহীন দেখিয়েছে রোহিতদের। সেই সুযোগ কাজে লাগালেন লাবুশেন, ট্র্যাভিস হেডেরা।

যে পিচে ভারতীয়দের দেখে মনে হচ্ছিল ব্যাটিং কঠিন, সেই পিচেই সহজে খেললেন হেড। তাঁর ১৪১ বলে ১৪০ রানের আগ্রাসী ইনিংসই ভারতকে এক রকম লড়াই থেকে ছিটকে দিল। ১৭টি চারের পাশাপাশি ৪টি ছয় এল তাঁর ব্যাট থেকে। তাঁর আগে লাবুশেন খেলেন ৬৪ রানের ইনিংস। প্রথম টেস্টে ২৯৫ রানে অস্ট্রেলীয়দের দাপটে কোণঠাসা ভারতীয়দের মধ্যে ‘ব্যতিক্রম’ সিরাজ। হেডকে আউট করার পর অপ্রয়োজনীয় এবং অনভিপ্রেত আগ্রাসন দেখালেন। যা আসলে হতাশার বহিঃপ্রকাশ। বুমরা পায়ের চোট সামলে ৪ উইকেট নিয়েছেন ৬১ রান দিয়ে। আর সিরাজের ৪ উইকেট এসেছে ৯৮ রানের বিনিময়।

ভারতের ১৮০ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে তুলেছে ৩৩৭ রান। ১৫৭ রানে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় ইনিংসে যে ভাবে খেলা উচিত ছিল, সে ভাবে ব্যাট করতে পারলেন না বিরাট কোহলিরা। পরিস্থিতির গুরুত্ব না বুঝে উইকেট ছুড়ে দিলেন লোকেশ রাহুল (৭)। এত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর ওপেন করতে নেমে রাহুলের কাছ থেকে এই ধরনের শট মেনে নেওয়া যায় না। স্কট বোল্যান্ডের বাউন্সে ঠকে গেলেন আর এক ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল (২৪)। শুভমন গিল (২৮) কিছুটা ধরে খেলার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি আউট হলেন মিচেল স্টার্কের দুরন্ত বলে। বিরাট কোহলি (১১) আবার ব্যর্থ। সেই অফ স্টাম্পের একটু বাইরের ধরা পড়লেন। রোহিতকেও (৬) মিডল অর্ডারের বেমানান দেখাচ্ছে।

দিনের শেষে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের রান ৫ উইকেটে ১২৮। ইনিংস হার বাঁচাতে আরও ২৯ রান প্রয়োজন রোহিতদের। ২২ গজে অপরাজিত আছেন ঋষভ পন্থ (২৮) এবং নীতীশ কুমার রেড্ডি (১৫)। পন্থ চেনা মেজাজে আগ্রাসী খেলার চেষ্টা করছেন। ঝুঁকি নিতে গিয়ে নিজের দ্বিতীয় বলেই রান আউট হয়ে যাচ্ছিলেন পন্থ। ৬৬ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর মাঠে নেমে এই ধরনের মানসিকতাও সমর্থনযোগ্য নয়। বরং নীতীশ বুঝে খেলার চেষ্টা করছেন। দ্বিতীয় টেস্টেই যথেষ্ট পরিণতির ছাপ দেখা তাঁর মধ্যে।

রবিবার অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য নিশ্চিত ভাবেই থাকবে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে দেওয়া। বাকিটা কাজটা সারতে কামিন্সের দলের জন্য খুব কঠিন হবে বলে মনে হয় না। অ্যাডিলেডে কখনও দিন-রাতের টেস্ট হারেনি অস্ট্রেলিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.