রবিতেও ‘ভূতুড়ে ভোটারের খোঁজ মিলল’ রাজ্যে! মঙ্গলে কমিশনের ফুল বেঞ্চের মুখোমুখি হবে তৃণমূল

জেলায় জেলায় ‘ভূতুড়ে’ ভোটারের খোঁজ জারি রেখেছে তৃণমূল। রবিবারও ভোটার তালিকা যাচাই করতে গিয়ে নানা জায়গায় একই এপিক নম্বরে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির নামের হদিস রাজ্য জুড়ে মিলেছে বলে দাবি তাদের। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থও হতে চলেছে তৃণমূল। আগামী মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় কমিশনের ‘ফুল বেঞ্চের’ সঙ্গে দেখা করবেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।

সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোরের সভায় ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো ভোটার খুঁজে বার করার নির্দেশ দলীয় নেতা-কর্মীদের দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটার তালিকা যাচাইয়ের সেই কাজে একটি কোর কমিটি তৈরি হয়েছে। তার পর থেকেই জেলার নেতারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজ করে যাচ্ছেন। এ দিকে, একই এপিক নম্বরে একাধিক নাম তোলার যে অভিযোগ নিয়ে সরব তৃণমূল, সেই অভিযোগ স্বীকারও করেছে কমিশন। তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ ভোটার কার্ডের ব্যাপারে তিন মাসের মধ্যে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে। তাতে সংশ্লিষ্ট ভোটারদের জাতীয় ইউনিক নম্বর দেবে কমিশন।

সেই আবহে কমিশনের মুখোমুখি হতে চলেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার তৃণমূলের যে ১০ জনকে নিয়ে প্রতিনিধিদলের কমিশনে যাওয়ার কথা, সেই দলে রয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার। রয়েছেন সাগরিকা ঘোষ, কীর্তি আজ়াদ, সাজদা আহমেদ, অসিতকুমার মাল, আবু তাহের খান, প্রকাশ চিক বরাইক এবং সাকেত গোখলে।

রবিবারও ‘ভূতুড়ে’ ভোটার খুঁজতে বেরিয়েছিলেন হুগলির শ্রীরামপুর শহর তৃণমূলের সহ-সভাপতি পিন্টু নাগ। তাঁর অভিযোগ, ভোটার তালিকায় এমন প্রচুর নাম মিলেছে, এলাকায় যাঁদের কোনও অস্তিত্বই নেই। আবার একই এপিক নম্বরে একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে। পিন্টুর দাবি, ‘‘বিজেপি আর কমিশন মিলেমিশে এ কাজ করছে। দলকে জানাব। এই তথ্যই কমিশনের সামনে তুলে ধরা হবে।’’ ভোটার তালিকায় ‘কারচুপি’র অভিযোগ তুলে বিজেপি সিপিএমের উত্তরসূরি বলে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। তাঁর বিধানসভা এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘‘যখন সিপিএম রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল, তখন এখানে বিভিন্ন রকম ভাবে ভোটার লিস্টে কারচুপি, রিগিং, থ্রেট কালচার করেছে। ঠিক সেই রকম ভাবে বিজেপি, আরএসএস-এর মতো সংগঠন কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোটার লিস্টে কারচুপি করছে।’’ বেচারামের নির্দেশ, ‘‘সিপিএম বা বিজেপি বাড়ির ছেলে ভিন্‌রাজ্যে থাকলে যাচাই করে দেখুন, ভিন্‌রাজ্যের ভোটার লিস্টে তাঁর নাম আছে কি না। থাকলে অভিযোগ জানান।’

পাল্টা সিঙ্গুর বিধানসভায় বিজেপির আহ্বায়ক মধুসূদন দাস বলেন, ‘‘সকলে জানে, কারা সিপিএমের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলে। কারা ছাপ্পা, রিগিং, বুথ জ্যাম করে ক্ষমতায় আছে। ভুয়ো ভোটার কার্ড তৈরিতে মাস্টার তৃণমূল। ‌বাংলাদেশি রোহিঙ্গা থেকে অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার লিস্টে নাম তুলে দেওয়া, আধার কার্ড বানিয়ে দেওয়া কারা করে, তা সকলে জানে।’’

দু’বছর আগে প্রয়াত পিতার নাম ভোটার তালিকায় থাকা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। কোনও ভুয়ো ভোটার ভোট দিতে এলে তাঁর হাত-পা আস্ত থাকবে না বলে শনিবারই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। সেই নরেন্দ্রনাথেরই প্রয়াত পিতার নাম মিলেছে ভোটার তালিকায়। নরেন্দ্রনাথ পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের চক বানকোলা গ্রামের ৮৭ নম্বর বুথের ভোটার। সেই বুথের ভোটার তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ১১৮ নম্বরে নরেন্দ্রনাথের নাম রয়েছে। আর তাঁর পিতা অরিন্দম চক্রবর্তীর নাম রয়েছে ১১৭ নম্বরে। এ দিকে, বছর দুয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন অরিন্দম। এ নিয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথকে বিঁধছে পদ্মশিবির। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উনি ভুয়ো ভোটারদের হাত-পা ভাঙবেন বলছেন। খুব ভাল কথা। কিন্তু ওঁর বাবা দু’বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর নাম এখনও ভোটার তালিকায় কী করছে?’’

পাল্টা রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘কোনও এলাকায় কেউ প্রয়াত হলে বা কেউ এলাকা ছেড়ে চলে গেলে কমিশনের দায়িত্ব ভোটার তালিকা থেকে সেই ব্যক্তির নাম সরানো। কমিশন নিজের কাজ ঠিক মতো করছে না। তাই জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তবে কারও বাড়িতে কেউ প্রয়াত হলে, পরিবারেরও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বিষয়টি সঠিক জায়গায় জানানো। তা হয়েছে কি না, সেটা আমি জানি না। তা নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীই বলতে পারবেন।’’ এ ব্যাপারে নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.