পাঁজরে গুরুতর আঘাত নিয়ে আইসিইউ-তে ভর্তি ক্রিকেট খেলোয়াড় শ্রেয়স আয়ার। সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার অ্যালেক্স ক্যারের ক্যাচ ধরতে গিয়ে পাঁজরে চোট লাগে তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের এক দিনের দলের সহ-অধিনায়ককে। সূত্রের খবর, ‘রিব কেজ ইনজুরি’-তে ভুগছেন শ্রেয়স। তাঁর শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে। ‘রিব কেজ’ হল বুকের ভিতরে হাড়ের কাঠামো, যাকে ‘বক্ষপিঞ্জর’ বলে। ওই অংশের হাড় ভেঙে গেলে, হাড়ে ফাটল ধরলে বা হাড় থেঁতলে গেলে মারাত্মক অবস্থা হয় রোগীর। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে।
‘রিব কেজ ইনজুরি’ কী?
বক্ষপিঞ্জর বা সহজ কথায় যাকে ‘বুকের খাঁচা’ বলে, তার কাজ বল হার্ট, ফুসফুস, প্লীহার মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে সুরক্ষা দেওয়া। ওই খাঁচার হাড়ে যদি আচমকা আঘাত লাগে বা হাড় থেঁতলে যায়, তখন ক্ষতি হতে পারে হার্ট, ফুসফুসেরও। এই ধরনের আঘাতকে বলে ‘থোরাসিক ট্রমা’। সাধারণত দেখা যায়, পাঁজরের হাড়ে যদি চিড় ধরে বা হাড় ভেঙে যায়, তা হলে সেই অংশের রক্তবাহী নালিতেও ছিদ্র হয়ে যায়। ফুসফুসের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে এক দিকে, রক্তনালি থেকে অবিরাম রক্ত চুঁইয়ে বেরোতে শুরু করে, অন্য দিকে রোগীর মারাত্মক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ফুসফুসের কোষে আঘাত বেশি লাগলে, শ্বাসকষ্ট বাড়ে, হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যায়। খুব দ্রুত চিকিৎসা না হলে রোগীর বিপদ আরও বাড়তে পারে।
পাঁজরে গুরুতর চোট বা থোরাসিক ট্রমার কারণে শুধু হাড় ভাঙে তা নয়, কোষ ও নানা অঙ্গেরও ক্ষতি হয়। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুসারে, পাঁজরে আঘাত লাগতে পারে নানা কারণে। প্রথমত, দুর্ঘটনায় হাড় ভাঙতে পারে, দ্বিতীয়ত, খেলায়ারড়দের এমন চোট বেশি লাগে। যেমন শ্রেয়সের হয়েছে। ক্যাচ ধরতে গিয়ে মাটিতে খুব জোরে পড়লে তা থেকে পাঁজরের হাড়ে চিড় ধরতে পারে। আঘাত গুরুতর হলে ওই অংশের কোষ, নরম অস্থিগুলিও ভেঙে যায়। রক্তনালী ফেটে যায়। তিন নম্বর কারণ হল, অস্টিয়োপোরোসিস। এতে হাড় আগে থেকেই নরম ও দুর্বল থাকে। সামান্য আঘাতে বা খুব জোরে জোরে কাশলেও তখন পাঁজরের হাড়ে আঘাত লাগতে পারে। অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যেতে পারে।
‘রিব কেজ ইনজুরি’-র ক্ষেত্রে আগে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা ও পাঁজরের ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। রোগীর শ্বাসকষ্ট বেশি হলে অক্সিজেন থেরাপিও করা হয়। অনেক সময়ে দেখা যায়, চোট সেরে যাওয়ার সাত থেকে দশ দিনের মাথায় ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন রোগী। তাই চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকা খুব জরুরি। পাশাপাশি হাড়ের ঘনত্ব কতটা ও তাতে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, জানার জন্য বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ডুয়াল এনার্জি এক্স-রে করা হয়। একই সঙ্গে পাঁজর বা ফুসফুসে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, তা নির্ধারণের জন্য চেস্ট সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা হয়ে থাকে।

