এক দিন আগেই তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ইরানে শাসকবদল কেন হবে না। এক দিন পরে সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের গলায় শোনা গেল উল্টো কথা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানালেন, ইরানে শাসকবদল চাইছে না আমেরিকা। কেন, সেই যুক্তিও দিয়েছেন। ট্রাম্পের দাবি, তিনি কোনও রকম ‘বিশৃঙ্খলা’ দেখতে চান না। যদিও মাঝের এই এক দিনে আরও ‘উলটপুরাণ’ ঘটেছে। সোমবার গভীর রাতে ট্রাম্প ইজ়রায়েল এবং ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করেন।
সোমবার নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে ট্রাম্প ইরানে শাসকবদল নিয়ে সওয়াল করেছিলেন। মঙ্গলবারের মন্তব্যের পরে সেই পোস্ট নিয়ে তাঁকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘যদি বলে থাকি, বলেছি। কিন্তু আমি এটা চাই না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি সব কিছু শান্ত দেখতে চাই।’’ কেন তিনি ইরানে শাসকবদল চাইছেন না, তা-ও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শাসকবদলের সময়ে বিশৃঙ্খলা হয়। আমরা সেই বিশৃঙ্খলা দেখতে চাই না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, ইরানিরা খুব ভাল ব্যবসায়ী হয়। ওদের প্রচুর তেল রয়েছে। ওদের ভাল থাকা উচিত। ওদের আবার পুনর্গঠন করার ক্ষমতা থাকা উচিত। ওদের কখনওই পরমাণুশক্তি থাকবে না। তা বাদে ওদের ভাল কাজ করা উচিত।’’
ট্রাম্প সোমবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে লেখেন, ‘‘কেন সেখানে শাসকবদল হবে না?’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘শাসকবদল শব্দটা ব্যবহার করা রাজনৈতিক ভাবে ঠিক হবে না। কিন্তু যদি ইরানের বর্তমান শাসক সে দেশকে শ্রেষ্ঠত্বের পর্যায়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন, তা হলে কেন শাসকবদল হবে না?’’ তার পরেই জল্পনা শুরু হয়, তবে কি এ বার ইরানের আয়াতোল্লা আলি খামেনেই সরকারের পতন ঘটাতে চায় আমেরিকা! ট্রাম্পের এই বক্তব্যের আগে যদিও রবিবার আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্পষ্ট, আমরা শাসকবদল চাই না। ওদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে চাই। তার পরে ইরানিদের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সমঝোতা নিয়ে কথা বলতে চাই।’’ তিনি এ-ও জানান যে, কূটনৈতিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে ইরানের সঙ্গে সমঝোতা করতে চান তাঁরা। তার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে ট্রাম্পের ওই মন্তব্যে জল্পনা শুরু হয়। এ বার যদিও ট্রাম্প অন্য কথাই বললেন। জানিয়ে দিলেন, ইরানে শাসকবদল দেখতে চায় না আমেরিকা।
প্রসঙ্গত, রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ইরানের তিন পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালায় আমেরিকা। সোমবার রাতে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিনঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। তার কয়েক ঘণ্টা পরে (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ) ট্রাম্প তাঁর সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ‘ট্রুথ’-এ ইরান-ইজ়রায়েলের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করেন। তিনি লেখেন, “এই সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্তে ইরান ও ইজ়রায়েল দু’দেশই সহমত হয়েছে। আগামী ছ’ঘণ্টার মধ্যেই সম্পূর্ণ সংঘর্ষবিরতি শুরু হবে। প্রথমে ইরান সংঘর্ষবিরতি শুরু করবে এবং তার ১২ ঘণ্টা পরে ইজ়রায়েল তা অনুসরণ করবে। ২৪ ঘণ্টা পর দু’দেশের মধ্যে ১২ দিনের টানা যুদ্ধ শেষ বলে ঘোষণা করা হবে। এক পক্ষের সংঘর্ষবিরতি চলাকালীন অপর পক্ষকেও শান্তি বজায় রাখতে হবে।” তার কয়েক ঘণ্টা পরে তিনি জানিয়ে দিলেন, ইরানে শাসকবদল দেখতে চান না তিনি।