রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা প্রস্তাব – ১১-১৩মার্চ ২০২২, কর্ণাবতী

ভারতকে স্বাবলম্বী করতে কাজের সুযােগ বাড়ানাে প্রযােজন প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য, বিপুল মানবশক্তি এবং অন্তর্নিহিত উদ্যমকৌশল থাকায় ভারত নিজস্ব কৃষি, বস্তু নির্মাণ ও সেবা ক্ষেত্রকে পরিবর্তন করে কাজের পর্যাপ্ত সুযােগ গড়ে তুলে অর্থব্যবস্থাকে উচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। বিগত কোরােনা মহামারীর কালখণ্ডে আমরা যেখানে রােজগার তথা জীবিকার উপর তার প্রভাব অনুভব করেছি, সেখানে আবার অনেক নতুন কাজের সুযােগ বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে; যা থেকে সমাজের কিছুজন লাভান্বিতও হয়েছে। অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা (অ.ভা.প্র.সভা) এই বিষয়ের উপর জোর দিতে চায় যে, রােজগারের এই সমস্যার সফলতাপূর্বক সমাধান করার জন্য সম্পূর্ণ সমাজকেই এই সুযােগের সদ্ব্যবহারের জন্য নিজের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
অ.ভা..সভার মত এই যে, মানব কেন্দ্রিত, পরিবেশের অনুকূল, শ্রম প্রধান তথা বিকেন্দ্রীকরণ এবং লভ্যাংশের ন্যায়সঙ্গত বিতরণকারী ভারতীয় আর্থিক প্রতিমূর্তি (মডেল)কে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ, যা গ্রামীণ অর্থব্যবস্থা, সূক্ষ উদ্যোগ, লঘু উদ্যোগ ও কৃষি ভিত্তিক উদ্যোগকে সংবর্ধন করে। গ্রামীণ রােজগার, অসংগঠিত ক্ষেত্র ও মহিলাদের রােজগার এবং অর্থব্যবস্থাতে তাদের সামগ্রিক অংশগ্রহণের মতাে ক্ষেত্রগুলিকে উৎসাহ দেওয়া উচিৎ। আমাদের সামাজিক পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন যান্ত্রিক (টেকনিক্যাল) তথা স্বল্প দক্ষদের (সষ্ট স্কিন্স) অবশ্যই এগিয়ে আনার প্রয়াস করতে হবে।
ইহা উল্লেখযােগ্য যে, দেশের প্রত্যেক ভাগে উপরােক্ত দিশাতে রােজগার নির্মাণের অনেক সফল উদাহরণ রয়েছে। এই প্রচেষ্টার মধ্যে স্থানীয় বিশেষত্ব, প্রতিভা ও প্রযােজনীয়তাকে মাথায় রাখা হয়েছে। এমন অনেক স্থানে উদ্যোগী, ব্যবসায়ী, স্বল্প পুঁজির কর্মসংস্থান, নিজস্ব সহায়ক গােষ্ঠী ও সৈচ্ছিক সংগঠনগুলি বর্ধিত-মূল্যের সামগ্রী, সহকারিতা, স্থানীয় সামগ্রীর প্রত্যক্ষ বিক্রয় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি (স্কিল ডেভেলপমেন্ট) ইত্যাদি বিষযে প্রচেষ্টা আরম্ভ করেছে। এই প্রচেষ্টা হস্তশিল্প, খাদ্য নির্মাণ প্রক্রিয়া, গৃহােদ্যোগ ও পারিবারিক উদ্যোগের মতাে ব্যবসাকে উৎসাহ প্রদান করেছে। সেই সব অভিজ্ঞতাকে পরস্পরের মধ্যে মত বিনিময়ের মধ্য দ্বারা যেখানে প্রয়ােজন সেখানে তার প্রযােগের বিষয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। কিছু শৈক্ষিক ও ঔদ্যোগিক সংস্থা রােজগার নির্মাণের বিষয়ে উল্লেখযােগ্য অবদান রেখেছে। অ.ভা.প্র.সভা দুর্বল এবং বঞ্চিতদের সাথে সমাজের বড় অংশকে স্থায়ী রােজগারের ব্যবস্থা করাতে
সক্ষম এমন সুকৃতির প্রশংসা করে। সমাজে ‘স্বদেশী ও স্বাবলম্বন’-এর ভাবনা উৎপন্ন করার ব্যাপারে উপরােক্ত নতুন কর্মক্ষেত্রগুলি উৎসাহিত হবে।


অধিক উপার্জনের ক্ষমতাযুক্ত আমাদের বস্তু নির্মাণ ক্ষেত্রকে সুদৃঢ় করার প্রয়ােজন রয়েছে, যা আমদানির উপর আমাদের নির্ভরশীলতা কম করতে পারে। শিক্ষা আর পরামর্শের দ্বারা সমাজ, বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে উদ্যমকে উৎসাহ প্রদানকারী পরিবেশ দিতে হবে, যাতে তারা কেবল চাকরি পাওয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। এই রকম উদ্যমশীলতার ভাবনাকে মহিলা, গ্রামীণ, দূরস্থ তথা জনজাতি ক্ষেত্রেও উৎসাহ দেওয়ার প্রয়ােজন রয়েছে। শিক্ষাবিদ, উদ্যোগ জগতের প্রমুখ, সামাজিক নেতৃত্ব, সামাজিক সংগঠন তথা বিবিধ সংস্থা এই দিশাতে প্রভাবী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে আর তার জন্য সরকারি ও অন্যান্য সহযােগীর একসাথে কাজ করার প্রযােজন।
অ.ভা..সভা অনুভব করছে যে, তীব্রতার সাথে পরিবর্তনশীল আর্থিক তথা প্রযুক্তিগত পরিদৃশ্যের বৈশ্বিক স্পর্ধার মুখােমুখি হওয়ার জন্য আমাদের সামাজিক স্তরে নবােন্মেষী পদ্ধতির সন্ধান করতে হবে। ডিজিটাল অর্থব্যবস্থা এবং রপ্তানির সম্ভাবনা থেকে উৎপন্ন রােজগার ও উদ্যমশীলতার সুযােগের গভীর অন্বেষণ করা উচিৎ। রােজগারের পূর্বে ও চলাকালীন মানবশক্তির প্রশিক্ষণ, গবেষণা তথা প্রযুক্তির ব্যবহার, স্টার্ট আপ ও হরিত প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদির উৎসাহ প্রদানে আমাদের সহভাগী হতে হবে।
অ.ভা.প্র.সভা ভারতীয় অর্থব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করে স্থায়ী এবং সামগ্রিক বিকাশের লক্ষ্য প্রাপ্তি করার জন্য নাগরিকদের থেকে রােজগার নির্মাণকে ভারত কেন্দ্রিত প্রতিমূর্তির(মডেল) উপর কাজ করার আহ্বান করে। অ.ভা.প্র.সভা সমাজের সমস্ত বর্গকে আহ্বান করে যে, বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযােগ বাড়িয়ে আমাদের শাশ্বত মূল্যের উপর ভিত্তি করে এক সুস্থ কার্য-সংস্কৃতির স্থাপন করতে হবে, যাতে করে ভারত বৈশ্বিক আর্থিক পরিকাঠামাের উপর পুনরায় নিজের উপযুক্ত স্থানে অবস্থান করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.