অশান্তির পর মুর্শিদাবাদ সফর থেকে ফিরেই কেন্দ্রকে রিপোর্ট: রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন রাজ্যপাল বোস

মুর্শিদাবাদ থেকে ফিরে আসার পরেই কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি রিপোর্ট পাঠান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ওই রিপোর্টে সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বস্তুত, সংবিধানের এই অনুচ্ছেদেই রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা বর্ণিত রয়েছে। রাজভবন সূত্রে খবর, শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেই কেন্দ্রকে ওই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন বোস।

সূত্রের খবর, কেন্দ্রকে পাঠানো ওই চিঠিতে মূলত তিনটি বিষয় বিবেচনার জন্য বলেছেন তিনি। প্রথমত, রাজ্যের শাসনব্যবস্থা সঠিক ভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হলে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, অনুসন্ধান কমিশন আইন, ১৯৫২ অনুসারে একটি অনুসন্ধান কমিশন নিয়োগ করার কথাও বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজ্যপাল। ওই কমিশনের কাজ হবে সব দিক খতিয়ে দেখে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আটকানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর যে জেলাগুলিকে নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) নিজেদের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় আরও সীমান্তচৌকি তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। অশান্তি কবলিত এলাকা পরিদর্শন এবং সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলার পরে এটি অত্যন্ত প্রয়োজন বলে করছেন রাজ্যপাল।

স‌ংশোধিত ওয়াকফ আইন ঘিরে গত মাসে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু অঞ্চলে। বিএসএফের সাহায্য নিয়ে রাজ্য পুলিশ শুরুর দিকে সেখানে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছিল। পরে হাই কোর্টের নির্দেশে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়। মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে যাঁরা ঘরছাড়া হয়েছিলেন, তাঁদের একাংশকে নিয়ে রাজভবনেও গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ অন্যেরা। রাজ্যপালের কাছে তাঁরা পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন। শমসেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে আসার জন্যও রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে এপ্রিলের মাঝামাঝি দু’দিনের সফরে (১৮ এবং ১৯ এপ্রিল) মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে গিয়েছিলেন বোস। মালদহে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে তিনি। পরের দিন মুর্শিদাবাদের উপদ্রুত এলাকাও পরিদর্শন করেন। কথা বলেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। ‘আক্রান্ত’দের সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি। নিহতদের পরিবারকে দিয়ে আসেন রাজভবনের ‘শান্তিকক্ষ’ (পিস রুম)-এর নম্বরও। সেখান থেকে ফিরেই কেন্দ্রকে এই রিপোর্ট পাঠান তিনি।

সোমবার (৫ মে) মুর্শিদাবাদ সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মুর্শিদাবাদের অশান্তি-পরবর্তী সময়ে এই প্রথম ওই জেলা সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে একটি প্রশাসনিক সভাও করার কথা রয়েছে তাঁর। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের ঠিক আগেই রাজ্যপালের পাঠানো রিপোর্ট সংক্রান্ত এই তথ্য প্রকাশ্যে এল।

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “রাজ্যপাল যে রিপোর্ট দিয়েছেন, সেটি সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি নিজের রাজনৈতিক অ্যাসাইনমেন্টের কারণে রিপোর্টটি দিয়েছেন। তিনি জানেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, সুতরাং অবনতি যদি হয়… এই কথাগুলি এ ক্ষেত্রে আসে না। রাজ্যপাল এটিও জানেন ওই সীমান্তবর্তী এলাকার দায়িত্ব তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের, বিএসএফের। যদি ও পার থেকে হামলাকারীরা ঢুকে উস্কানি দেয় বা অনুপ্রবেশ হয়, তার দায়িত্ব বিএসএফের।” বিএসএফের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা বৃদ্ধির কথা স্মরণ করিয়ে কুণালের দাবি, বিএসএফকে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে, সেটিই উল্লেখ থাকা প্রয়োজন ছিল রাজ্যপালের রিপোর্টে। এই রিপোর্টে বিজেপিকে ‘খুশি করার মতো’ এবং বাংলাকে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে কলুষিত’ চেষ্টা হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল নেতার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.