আয়কর অফিসার সেজে হানা! বাগুইআটিতে গ্রেফতার পাঁচ আধাসেনা-সহ আট, এক জন প্রহরায় ছিলেন আরজি করেও

আয়কর দফতরের আধিকারিক সেজে এক মহিলার বাড়িতে হানা দেওয়া এবং তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল আট জনকে। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন সিআইএসএফ বা কেন্দ্রীয় আধাসেনার সঙ্গে যুক্ত। এক জন আবার কিছু দিনের জন্য আরজি কর হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বেও ছিলেন। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকেরা তদন্তের মাধ্যমে আট জনকে চিহ্নিত করেছেন। আরও কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মূল ঘটনার অভিযোগকারী বিনীতা সিংহ। পুলিশ জানিয়েছে, সৎমা আরতি সিংহের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলছিল তাঁর। সেই কারণেই আরতি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। সিআইএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি বিনীতার বাড়িতে আয়কর হানার ব্যবস্থা করেন। বিনীতাকে হেনস্থা এবং তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায় করাই ছিল আরতির উদ্দেশ্য। যে টাকা পাওয়া যাবে, তা ৫০-৫০ শতাংশ হিসাবে ভাগ হবে, এই মর্মে সিআইএসএফের এক ইনস্পেক্টরের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন আরতি।

সাংবাদিক বৈঠকে বিধাননগর পুলিশ।

বিধাননগরের এয়ারপোর্ট ডিভিশনের পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ঐশ্বর্য সাগর জানিয়েছেন, গত ১৮ মার্চ বাগুইআটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বিনীতা। তিনি জানিয়েছেন, গভীর রাতে চিনার পার্ক এলাকায় তাঁর বাড়িতে কয়েক জন হানা দেন এবং নিজেদের আয়কর আধিকারিক বলে পরিচয় দেন। বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নগদ টাকা এবং গয়না তাঁরা নিয়ে যান বলে অভিযোগ। বাজেয়াপ্ত জিনিসপত্রের কোনও তালিকা দেওয়া হয়নি বিনীতাকে। উল্টে বাড়ির সিসি ক্যামেরার ডিভিআর কেটে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। কয়েক ঘণ্টা পর এই আয়কর হানার বিষয়ে সন্দেহ হয় বিনীতার। তিনি সোজা আয়কর দফতরেই চলে যান। জানতে পারেন, সেখান থেকে আদৌ তাঁর বাড়িতে কেউ যাননি। এর পরেই থানায় লিখিত অভিযোগ জানান বিনীতা।

বাগুইআটি থানার পুলিশ বিনীতার বাড়ির আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে। জানা যায়, একটি পিক-আপ ভ্যান এবং একটি বাইকে করে সেখানে এসেছিলেন ভুয়ো আয়কর আধিকারিকেরা। গাড়ির নম্বর দেখে প্রথমে তার চালককে গ্রেফতার করা হয় সাউথ পোর্ট এলাকা থেকে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিউ আলিপুর থানা এলাকা থেকে ধরা হয় এক দালালকে। তাঁর সূত্র ধরে সিআইএসএফ ইনস্পেক্টর পর্যন্ত পৌঁছোয় পুলিশ। ফরাক্কা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর একে একে ধরা পড়েন কেন্দ্রীয় আধাসেনার আরও চার জন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন হেড কনস্টেবল, কনস্টেবল এবং এক মহিলা কনস্টেবল। ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, তিনি মাস চারেক আরজি কর হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, টাকার জন্যই এই ষড়যন্ত্রে তাঁরা লিপ্ত হয়েছিলেন। অভিযুক্ত দালাল এবং বিনীতার সৎমা আরতিকে নিজেদের হেফাজতে রেখেছে পুলিশ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। বাকিদের জেল হেফাজতে রাখা হয়েছে।

সিআইএসফের যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা হলেন ইনস্পেক্টর অমিত সিংহ, কনস্টেবল লক্ষ্মী চৌধুরী, বিমল থাপা, হেড কনস্টেবল রামু সরোজ এবং আর জনার্দন সাউ। আরজি করে চার মাস নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন লক্ষ্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.