তাপপ্রবাহে কাজ কমিয়ে ঠান্ডা ঘরে বিশ্রাম পুলিশের কুকুর ও ঘোড়াদের

ডিউটির সময় কমিয়ে করা হয়েছে প্রায় অর্ধেক। দুপুরে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকেই আর বাইরে বার করা হচ্ছে না। শরীর সুস্থ ও সতেজ রাখতে বদলানো হয়েছে খাদ্য তালিকাও। প্রত্যেককে নিয়ম করে রাখা হচ্ছে এসি ঘরে। প্রয়োজনে দেওয়া হচ্ছে স্যালাইন। ইডেনে পর পর আইপিএল ম্যাচের চাপের সঙ্গে তীব্র দহনজ্বালা, দুইয়ের জেরে কাহিল কলকাতা পুলিশের ঘোড়া এবং কুকুরেরা। তাই তাদের সুস্থ রাখতে এমনই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আগামী এক সপ্তাহে কলকাতায় বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ইতিমধ্যেই শহরের তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। গরমে কাহিল দশা সাধারণ মানুষের। কার্যত একই অবস্থা কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনীর ঘোড়া এবং ডগ স্কোয়াডের কুকুরদের। ঘোড়া এবং কুকুরদের সুস্থ রাখতে নেওয়া হয়েছে আলাদা আলাদা ব্যবস্থা। আগে ঘোড়াদের টানা চার ঘণ্টা ডিউটি করানো হলেও আপাতত তা বন্ধ। প্রতিদিন দু’ঘণ্টা করে ডিউটি দেওয়া হয়েছে ঘোড়াদের। দুপুরের দিকে, অর্থাৎ যখন রোদের তেজ সবচেয়ে বেশি থাকে, তখন ঘোড়াদের বাইরে বার করার উপরে রয়েছে কিছু বিধিনিষেধও। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘোড়াদের খাবারের তালিকাতেও এখন বদল আনা হয়েছে। গরমের কারণে প্রতিটি ঘোড়াকে গ্লুকোজ় বা ওআরএস মেশানো জল দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। থাকছে ঘোড়াদের স্নান করানোর ব্যবস্থাও। এ ছাড়া, ঘোড়াদের সবুজ ঘাস খাওয়ানোর উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। ডিউটি সেরে আসার পরে তাদের রাখা হচ্ছে এসি ঘরে। কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনীতে আপাতত ৭১টি ঘোড়া রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে থাকলেও বাকিদের রাখা হয়েছে এস এন ব্যানার্জি রোডের আস্তাবলে। ওই আস্তাবলে ব্যবস্থা করা হয়েছে এসি ঘরের। কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনীর পশু চিকিৎসক সুরজিৎ বসু বললেন, ‘‘গরমে মানুষের মতো পশুদেরও সমস্যা হয়। ঘোড়াদের সুস্থ রাখতে খাবার থেকে শুরু করে জল, সব কিছুর জন্যই আলাদা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘোড়াকেই আলাদা ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। যে সমস্ত ঘোড়ার বয়স বেশি, তাদের জন্য থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। খুব প্রয়োজন না হলে এই সময়ে তাদের বাইরে বার করতে বারণ করা হয়েছে।’’

ঘোড়ার মতো কুকুরদের জন্যও থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডে আপাতত ৩৪টি কুুকুর আছে। কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে রাখা ডগ স্কোয়াডের ওই সদস্যদের রোদে বেরিয়ে অনুশীলন আপাতত বন্ধ। চিকিৎসকের পরামর্শে খাবারের পাতে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের। তার বদলে ঘোল বা দই দেওয়া হচ্ছে দু’বেলা। সূত্রের দাবি, আগে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত প্রশিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ দিতেন ওই ৩৪টি কুকুরকে। গরমের জন্য তা এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের ভিতরে ওই প্রশিক্ষণ চললেও বাইরের প্রশিক্ষণ আপাতত বন্ধ রয়েছে গরমের জন্য। বাইরের ডিউটিতে গেলে হ্যান্ডলাররা সঙ্গে রাখছেন বরফের জ্যাকেট, ভেজা তোয়ালে এবং গ্লুকোজ়। এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, বাইরের ডিউটিতে গেলেও কুকুরদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য বার বার ভেজা তোয়ালে দিয়ে তাদের শরীর মোছাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ডিউটি না করিয়ে কম সময়ের ডিউটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া, পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কুলার বা এসিতে রাখা হচ্ছে কুকুরদের।

বর্তমানে কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডে যে ৩৪টি কুকুর রয়েছে, তাদের মধ্যে ২৫টি ল্যাব্রাডর, চারটি জার্মান শেপার্ড, একটি বিগল, একটি রটওয়েলার ও একটি ডোবারম্যান। এ ছাড়া, রয়েছে দু’টি ককার স্প্যানিয়েল। এই বাহিনীর নতুন ১১টি সদস্যেরও প্রশিক্ষণ চলছে চণ্ডীগড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.