তখনও স্কুল শেষ হয়নি। কোনও কোনও ক্লাসে চলছিল শেষ পিরিয়ড। বিকট শব্দ। তার পরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে স্কুলের একাংশ। প্রাথমিক ভাবে অনেকে বুঝতে পারেননি কী ঘটেছে! ঘটনাস্থলে এসে সকলে দেখেন, স্কুলভবনের একাংশের উপর ভেঙে পড়েছে বায়ুসেনার বিমান! শুধু তা-ই নয়, আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করেছে স্কুলভবনের ওই অংশটিকে। ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে এক জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫০ জনের বেশি। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
বাংলাদেশের স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড়েছিল। তার পরেই সেটি ভেঙে পড়ে ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপর। ওই স্কুলের যে ভবনে বিমানটি ভেঙে পড়ে সেখানে ১৬টি ক্লাসরুম আর শিক্ষকদের চারটি ঘর ছিল। প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হত এই ভবনে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কক্ষের সামনে বিমানটি ঢুকে আসে। সেই সময়ে ওই দুই শ্রেণিকক্ষেই ক্লাস চলছিল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ক্লাস শেষ হওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। বিমান ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায় স্কুলের ওই ভবনে।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ামাত্র স্কুলের সামনে ভিড় বাড়তে থাকে অভিভাবকদের। সকলের চোখেমুখেই উৎকণ্ঠার ছাপ। সকলেই দিশাহারা। ধ্বংসস্তূপের নীচে সন্তানদের খুঁজতে শুরু করেন তাঁরা। তবে উদ্ধারকারীদল কাউকেই ধ্বংসস্তূপের কাছে যেতে দিচ্ছে না। অনেক অভিভাবকই দাবি করছেন, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের খুঁজে পাচ্ছেন না। ঘটনাস্থলে থাকা লাকি আক্তার নামে এক অভিভাবক প্রথম আলোকে জানান, তাঁর দুই সন্তানই ওই স্কুলে পড়ে। তবে এক জনকে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে বার করতে পেরেছেন। ছোট ছেলে এখনও নিখোঁজ। ফিরদৌসি বেগম নামে আর এক অভিভাবক তন্ন তন্ন করে তাঁর মেয়েকে খুঁজছেন ঘটনাস্থলে। মোবাইলে মেয়ের ছবি। সকলকে সেই ছবি দেখিয়ে মেয়ের সন্ধান করছেন।অনেক অভিভাবক আবার ভিড় করছেন হাসপাতালের বাইরে। স্বজনহারাদের কান্নায় ভারী হয়ে আছে সেখানকার পরিবেশ। অনেকে আবার আহতদের ভিড়ে নিজের সন্তানকে খুঁজছেন।
বাংলাদেশের বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়েছে, তাদের এফ-৭ বিমানটি ভেঙে পড়েছে। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হত ওই বিমানটি। তবে কী ভাবে সেটি ভাঙল, তা নিয়ে বিশদে কিছু জানায়নি বাংলাদেশের বায়ুসেনা। পরে জানা যায় ওই বিমানের পাইলটেরও মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে দমকল ছাড়াও রয়েছে সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। বিমান দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারের তরফে এক দিন জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।