দেড়শো জনের পারিবারিক গ্রুপে আতঙ্ক, উদ্বেগ, আশঙ্কার প্রহর! কলকাতার বাসিন্দা রূপাণীর হতবাক পরিজনেরা কী বলছেন

সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ চত্বরে সাধারণ একটি মোটর পার্টসের দোকান। নাম— মনোজ অটোমোবাইল্‌স। দেখে বোঝার উপায় নেই, ওই দোকানের মালিকের নাম বিপুল রূপাণী। গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর তুতো ভাই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিমান দুর্ঘটনায় বিজয়ের মৃত্যু খবর নিশ্চিত হওয়ার পর আনন্দবাজার ডট কমের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। দাদার মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন রূপাণীরা। তাঁদের ১৫০ জনের পারিবারিক হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপে শুধু উদ্বেগ, আশঙ্কা আর আতঙ্কের বার্তা আসছে। মৃত্যুর কথা মানতে পারছেন না কেউ। সকলের মুখে একটাই কথা— বিজয় ভাইয়ের কী হল!

অহমদাবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে যে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, তাতে বিজয় ছিলেন। সেই বিমানে চেপেই তাঁর লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাটি ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে বিমানটি ভেঙে পড়ে। বিজয়ের মৃত্যুর খবর সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিআর পাটিল। কলকাতায় তাঁর পরিবারে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া। এই ঘটনার পর বিজয়ের আত্মীয়েরা সকলেই গুজরাতে যেতে পারেন। বিজয়ের পরিবারের লোকজন অহমদাবাদের হাসপাতালে রয়েছেন। বিপুল জানিয়েছেন, সেখান থেকে এখনও কোনও খবর আসেনি। খবর পেলেই তাঁরা রওনা দেবেন।

Cousin of Vijay Rupani after the news of the plane crash in Ahmedabad

রূপাণীদের বৃহত্তর পরিবারের অনেকেই গত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে কলকাতায় থাকেন। বিজয়ের নিজের দাদা উমেদ রূপাণী থাকেন ভবানীপুরে। বিমান দুর্ঘটনার খবরে ভেঙে পড়েছেন তিনি। পারিবারিক সূত্রে প্রায়ই বিজয় কলকাতায় আসতেন। শেষ বার এসেছিলেন গত বছর, বাড়িরই একটি পুজোয়। বিপুল জানিয়েছেন, বিমান দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে তাঁদের পারিবারিক হোয়াট্‌স গ্রুপে মুহুর্মুহু বার্তা ঢুকছে। সকলে বার বার খোঁজ নিচ্ছেন। যে যা খবর পাচ্ছেন, গ্রুপে জানাচ্ছেন। পরিবারের সকলে আতঙ্কিত।

রূপাণীদের দোকানে গিয়ে দেখা গেল, তাঁদের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপটির নাম ‘রূপাণী গ্রুপ’। লালের উপর বড় বড় হরফে সেই নাম লেখা। গ্রুপে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর ঢুকছে পর পর। আসছে বিজয়ের ছবি, বিজয়ের টিকিটের ছবি। অধিকাংশ মেসেজই গুজরাতিতে লেখা। বিপুল নিজেও দোকানের ল্যাপটপে খবর চালিয়ে রেখেছেন। কথা বলতে বলতে বার বার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছিলেন তিনি। ফোনাফুনিও চলছিল। উদ্বেগ আর আতঙ্কের ছাপ তাঁর চোখেমুখে ছিল স্পষ্ট।

বিপুলই জানিয়েছেন, তাঁদের বিরাট পরিবার। সকলেই ওই গ্রুপের সদস্য। প্রায় সকলেই গ্রুপে যথেষ্ট সক্রিয়। সেই কারণেই হয়তো বিজয়ের দুর্ঘটনার খবরে গ্রুপের সকলে বিচলিত। উদ্বেগ চেপে রাখতে পারেননি কেউ।

বিজয় লন্ডনে যাবেন, জানতেন বিপুলরা। তবে বৃহস্পতিবারই যাওয়ার কথা জানতেন না আগে থেকে। আচমকা বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাঁরা শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন। বিপুল জানিয়েছেন, পরিবারের সকলের সঙ্গে বিজয়ের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি নিজে খুব শান্ত, ধীর স্বভাবের ছিলেন। যে কোনও প্রয়োজনে তাঁকে সবসময় ফোনে পাওয়া যেত। কোথাও কিছু ঘটলে আগেভাগে বিজয় সে খবর জানিয়ে দিতেন পারিবারিক গ্রুপে। জনসচেতনতামূলক খবরও জানাতেন। তাঁকে শেষ বার কবে রাগতে দেখেছেন, মনে করতে পারেননি বিপুল। বাড়ির সব অনুষ্ঠানে বিজয়কে পাওয়া যেত। গুজরাতের শাসকদলের বর্ষীয়ান নেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সবসময় পা রেখে চলতেন মাটিতে। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিজয় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর শোকের ছায়া বয়ে এনেছে কলকাতাতেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.