রাজ্যের একাধিক জায়গায় মনোনয়ন ঘিরে তুলকালাম। সে দিক থেকে অনেকটাই শান্ত পাহাড়। নেই কোনও কোলাহল, সংঘর্ষের নামগন্ধ। সেখানে লড়াইটা উন্নয়ন বনাম অনুন্নয়নের। সেই লড়াইয়েরই এক ছকভাঙা ছবি ধরা পড়ল দার্জিলিংয়ে। গ্রামে রাস্তা না থাকা, বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থা, পাহাড়ে ক্রমবর্ধমান দূষণ এবং যানজটের সমস্যার বার্তা নিয়ে ২২ কিলোমিটার দৌড়ে বিডিও অফিসে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিলেন এক নির্দল প্রার্থী। তাঁর প্রতিবাদের ভাষা সাড়া ফেলে দিয়েছে রাজ্য ছাড়িয়ে দেশে।
দার্জিলিং জেলার জোড়বাংলো সুখিয়াপোখরি মহকুমার সোনাদা গ্রাম পঞ্চায়েতের টুমসং খাসমহলের বাসিন্দা স্মরণ সুব্বা। পেশায় একজন গাড়িচালক। নেশায় অ্যাথলিট। তাঁর গ্রামের রাস্তা বেহাল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্ট্রেচারে করে কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ি ঢাল বেয়ে তাঁকে নামিয়ে তার পর অ্যাম্বুল্যান্সে চড়িয়ে নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে। স্কুলে যেতেও খুবই কষ্ট হয় খুদে পড়ুয়াদের। শুধু তাই নয়। চলতি বছর গরমের যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে ছত্রখান। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজট। দার্জিলিংয়েও গলদঘর্ম হতে হয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে পর্যটকদের। কিন্তু স্মরণের অভিযোগ, এ সব নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর।
সেই কারণেই গ্রামের সমস্যা সমাধান করতে এবং পাহাড়ের পরিবেশ রক্ষার বার্তা নিয়ে সোনাদা থেকে সুখিয়াপোখরি পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার পথ দৌঁড়ে বিডিওর কাছে মনোনয়ন জমা দিলেন স্মরণ। সোনাদা থেকে সুখিয়াপোখরি বিডিও অফিস পর্যন্ত পাহাড়ি রাস্তা ধরে তাঁর পৌছতে সময় লেগেছে প্রায় ৩ ঘণ্টা। স্মরণ বলেন, ‘‘আমাদের গ্রাম নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলেরই কোনও চিন্তা নেই। যোগাযোগের খুব সমস্যা। কোনও গাড়ি গ্রামে পৌঁছতে পারে না। কেউ অসুস্থ হলে বা বয়স্কদের স্ট্রেচারে করে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিয়ে যেতে হয়। কয়েক দশক এ ভাবেই কেটেছে। কোনও সুরাহা হয়নি। পাহাড়েও দূ্ষণ বেড়ে চলেছে। যানজট বেড়েছে। কোনও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সেই কারণে আমি দৌড়ে মনোনয়ন জমা দিলাম। গ্রামের প্রতিনিধি এক জন ভূমিপুত্র হিসেবে গ্রামের ও পাহাড়ের সমস্যার সমাধান করতে চাই। তাই কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়ছি না।’’