আমেরিকায় দাঁড়িয়ে পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টোও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ভারতকে। তার মাঝেই সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের গলায় শোনা গেল ভিন্ন সুর। ভারতকে সিন্ধু চুক্তি কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়েছে তারা। সোমবার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে সে কথা লিখেছে পাক বিদেশ মন্ত্রক। পহেলগাঁও হামলার পরে ওই চুক্তি স্থগিত রেখেছিল ভারত।
সোমবার পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক সমাজমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে লিখেছে, ‘সিন্ধু জলচুক্তি কার্যকর করা নিয়ে পাকিস্তান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আর্জি জানাই, ভারত যাতে অবিলম্বে এই চুক্তি স্বাভাবিক ভাবে কার্যকর করা শুরু করে এবং চুক্তির বাধ্যবাধকতা পূরণ করে।’ ৮ অগস্ট এই সিন্ধু চুক্তি নিয়ে সালিশি আদালত যে রায় দিয়েছিল, তাকেও স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। তাদের দাবি, ওই রায়ে বলা হয়েছে, ভারতকে পশ্চিমের নদীগুলি থেকে জল ছাড়তে হবে যাতে পাকিস্তান ‘অবাধে ব্যবহার’ করতে পারে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, চুক্তি মেনে জল ছাড়তে হবে। ভারত যা ‘আদর্শ’ মনে করছে, তা করলে হবে না। প্রসঙ্গত, ভারত এই সালিশি আদালতের কাজকে স্বীকৃতি দেয়নি।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন। হামলাকারী জঙ্গিরা পাকিস্তানের বলে প্রমাণ মিলেছে। ওই হামলার পরেই সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করে ভারত। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপে এই চুক্তি করেছিল ভারত এবং পাকিস্তান। সেই চুক্তি অনুযায়ী, বিপাশা, শতদ্রু, ইরাবতীর জলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে ভারতের হাতে। অন্য দিকে, সিন্ধু, বিতস্তা, চন্দ্রভাগার জল ব্যবহার করতে পারবে পাকিস্তান। জলের নিরিখে সিন্ধু ও তার শাখা এবং উপনদীর ৩০ শতাংশ জল ব্যবহার করতে পারবে ভারত। ৭০ শতাংশ পাবে পাকিস্তান। সিন্ধু, বিতস্তা, চন্দ্রভাগার জল ভারত যে ব্যবহার করতে পারবে না, তা নয়। চুক্তিতে বলা হয়েছে, এই তিন নদীর জল সেচের কাজের পাশাপাশি নৌ চলাচল, মাছ চাষ, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করতে পারবে ভারত।
রবিবার ফ্লরিডার টাম্পায় শিল্পপতি আদনান আসাদ আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন পাক সেনাপ্রধান। পাকিস্তানের কত শক্তি তা বোঝাতে গিয়ে মুনির হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। যদি মনে হয় আমরা ধ্বংসের পথে এগোচ্ছি, তবে অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ধ্বংস হব।’’ এর পরে ভারতের সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আমরা অপেক্ষা করব। যখন বাঁধ তৈরি করা হয়ে যাবে, আমরা ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সেই বাঁধ ধ্বংস করে দেব।’’
পাশাপাশি বিলাবল সোমবার এই সিন্ধু চুক্তি প্রসঙ্গে জানান, ভারত সরকারের কিছু পদক্ষেপ পাকিস্তানের ক্ষতিসাধন করছে। তাই পাকিস্তানের মানুষজনের উচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়া। সেই আবহে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক সোমবার ভারতকে সিন্ধু চুক্তি কার্যকর করার জন্য অনুরোধ করল।