স্বপ্নভঙ্গের দ্বিতীয় বার্ষিকী, মঙ্গলবার ‘তর্পণ’ করবে বিজেপি, সঙ্গে বিক্ষোভ সমাবেশ চলবে ধর্মতলায়

দু’বছর আগে ২ মে, ২০২১ গত বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনা ছিল। সকাল থেকে ইঙ্গিত থাকলেও দুপুর নাগাদ এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ‘স্বপ্নের ফলাফল’ থেকে অনেক দূরেই থমকে যেতে হচ্ছে বিজেপিকে। দু’শো পার করার স্বপ্ন দেখা বিজেপি ৭৭ আসনে থেমে যায়। দু’বছর পরে সেই স্বপ্নভঙ্গের দিন ‘তর্পণ’ কর্মসূচি নিচ্ছে রাজ্য বিজেপি। স্বপ্নভঙ্গের সেই ২মে রাজ্য বিজেপির প্রধান নেতা ছিলেন এখন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে আগামী মঙ্গলবার, ২ মে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ধর্মতলায় বিক্ষোভ সমাবেশের পরিকল্পনা নিয়েছে গেরুয়া শিবির। ওই দিন দলের সাংসদ, বিধায়কদের নিয়ে গত দু’বছরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে গঙ্গায় ‘তর্পণ’ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। থাকতে পারেন দিলীপও।

বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে ‘ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস’ অভিযোগ তুলে সরব হয় বিজেপি। শাসক তৃণমূলের আক্রমণে কর্মীদের মৃত্যু এবং ঘরছাড়া হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে গেরুয়া শিবির। ৪ মে বাংলায় চলে আসেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতায় কয়েকটি এলাকায় যাওয়ার পরে তিনি গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে বিজেপির এক বুথ সভাপতির বাড়িতে। অভিযোগ ছিল, তৃণমূলের হামলায় বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ওই বুথ সভাপতির মা শোভারানি মণ্ডল। নড্ডা বলেছিলেন, ‘‘প্রায় ৮০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। প্রাণে বাঁচতে মানুষ অসমে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। মহিলারাও আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ সব ঘটনা দেশভাগের সময়ের ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে’র কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে!’’ পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যাঁদের হাতে গুজরাত ও দিল্লির দাঙ্গার রক্ত লেগে আছে, তাঁদের মুখে এ সব কথা কেউ শুনবে?’’

এর পরেও অনেক বিতর্ক হয়েছে। ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে অমিত শাহের মন্ত্রক নবান্নকে চিঠি পাঠিয়েছে। ৬ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল এসেছিল রাজ্যে। সেই সঙ্গে নড্ডাও একটি সত্যানুসন্ধানী দল পাঠান। পরে কলকাতা হাই কোর্ট ওই বিষয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।

দু’বছর আগের সেই পর্ব নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আবার পথে নামতে চাইছে বিজেপি। ঠিক হয়েছে, ধর্মতলা এলাকায় কোনও জায়গায় বিক্ষোভ মঞ্চ হবে। পুলিশের অনুমতি মিলবে কি না, সে চিন্তা থাকলেও গেরুয়া শিবিরের প্রাথমিক ভাবনা— মঞ্চ বাঁধা হবে শহিদ মিনার চত্বরে সেনাবাহিনীর জমিতে। অবস্থান বিক্ষোভের অনুমতি আদায়ের জন্য আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে রাজ্য বিজেপি।

বিজেপির দাবি, তৃতীয় তৃণমূল সরকার রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলায় ৫৬ জন দলীয় কর্মীর মৃত্যু হয়েছে রাজনৈতিক সংঘর্ষে। এই মৃতদের ‘শহিদ’ হিসাবে দাবি করেই তাঁদের জন্য তর্পণ করতে চায় বিজেপি। তার সঙ্গে সম্প্রতি কালিয়াগঞ্জে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের মৃত্যুর ঘটনাকেও জুড়তে চায় বিজেপি। দলের পরিকল্পনা, এ পর্যন্ত মৃত দলীয় কর্মীদের ছবি নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে অংশ নেবেন দলীয় কর্মীরা। উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের সব সাংসদ ও বিধায়ককে। বেলা ১২টা নাগাদ সমাবেশ শুরু করে বিকেল ৫টায় সকলে মিলে বাবুঘাটের কাছে গঙ্গার বাজে কদমতলা ঘাটে তর্পণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.