ওড়িশার বালেশ্বর (Balasore) জেলার তিতিলাগড়ের (Titlagarh) এক ১৭ বছর বয়সী নাবালক কিশোর, তার ১২ বছর বয়সী ছোট ভাইকে খুন করে বাড়ির কাছেই পুঁতে রেখেছিল। প্রায় ৪৫ দিন পর তা জানা যায়, সকলের কাছে এই অপরাধ একটি রহস্য ছিল। পুলিস শনিবার বড় ভাইকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত কিশোর স্বীকার করেছে যে, সে মনে করত তার বাবা-মা ছোট ভাইয়ের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়, ভাইকেই ভালোবাসে এবং তাকে অবহেলা করে (Siblings Rivalry)।
দিনমজুর বাবা-মা, গত ২৯শে জুন তাদের ছোট ছেলের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে, পুলিস শিশু পাচারের ঘটনা সন্দেহ করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করে, কিন্তু কোনো ফল পায়নি। একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র আসে অভিযুক্তের মায়ের কাছ থেকে। তিনি জানান যে, ২৮শে জুন সন্ধ্যায় তার বড় ছেলে অস্বাভাবিকভাবে মেঝে পরিষ্কার করছিল। এই তথ্যটি তদন্তকারীদের বড় ভাইয়ের দিকে নজর ঘোরায়।
তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, পুলিস জানতে পারে যে অভিযুক্ত একটি মাটি কোপানোর কোদাল দিয়ে তার ভাইকে আঘাত করে এবং তারপর তাকে পুঁতে ফেলে। সে দু’বার শরীরটি পুঁতেছিল: প্রথমে ঘরের ভিতরে, এবং তারপর সন্দেহ এড়াতে একই রাতে এটিকে কাছেই একটি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যায়। তদন্তে পুলিস লাশটি খুঁড়ে বের করে। বর্তমানে, এই অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তকে ‘শিশু-আইন লঙ্ঘনকারী’ (Children In Conflict with Law – CICL) হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পুলিস জানিয়েছে, পারিবারিক সম্পর্কে অবহেলা ও ঈর্ষা থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে।
নিখোঁজ থেকে খুনের রহস্য উদ্ঘাটন:
ঘটনা শুরু হয় যখন পরিবারের ছোট ছেলে হঠাৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। মা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। কয়েকদিন ধরে তল্লাশি চললেও শিশুর কোনও খোঁজ মেলেনি। পরে মায়ের সন্দেহ বড় ছেলের দিকে ঘোরে। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ছোট ভাইকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
দেহ পুঁতে রাখা ও স্থান পরিবর্তন:
অভিযুক্ত জানায়, প্রথমে বাড়ির পিছনে ছোট ভাইয়ের দেহ পুঁতে রেখেছিল। পরে রাতের বেলা মায়ের শাড়ি দিয়ে দেহ বেঁধে প্রায় ৩০০–৪০০ মিটার দূরে আরেক স্থানে পুঁতে দেয়। পুলিস, ম্যাজিস্ট্রেট ও মেডিকেল অফিসারের উপস্থিতিতে দেহ উদ্ধার হয় এবং ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
খুনের কারণ:
পুলিস সূত্রে খবর, বড় ভাই মনে করত বাবা-মা ছোট ভাইকে বেশি ভালোবাসেন এবং তার প্রতি আগের মতো যত্নশীল নন। ঘটনার দিন দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়, এরপর রাগের মাথায় বড় ভাই রান্নাঘরের ছুরি দিয়ে ছোট ভাইয়ের পেটে আঘাত করে হত্যা করে।
প্রমাণ উদ্ধার ও তদন্ত:
অভিযুক্ত খুনে ব্যবহৃত ছুরি ও মায়ের শাড়ি পুলিশের হাতে তুলে দেয়। বর্তমানে তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে হাজির করা হয়েছে। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, এই ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত ছিল কি না অথবা বড় ভাইকে কেউ উস্কানি দিয়েছিল কি না।