স্বামীর কিডনি প্রতিস্থাপনের অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্ত্রী। শুক্রবার সেই অনুমতি দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। রায় ঘোষণা করতে গিয়ে তিনি জানালেন, সুস্থ ভাবে বাঁচা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিচারপতি সিংহের মন্তব্য, ‘‘রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে, তাই জীবন বাঁচানোই এখন সবচেয়ে জরুরি।’’
দীর্ঘদিন ধরে কিডনির অসুখে ভুগছেন পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা শেখ হাবিবুর রহমান। ২০২৪ সালে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে তাঁকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সেই মতো রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে কিডনি প্রতিস্থাপনের আর্জিও জানায় ওই হাসপাতাল। স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানায়, কিডনি প্রতিস্থাপনের সরকারি তালিকায় ২৬ নম্বরে আছেন হাবিবুর। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় হাবিবুরকে কিডনি দিতে এগিয়ে আসেন মধ্যমগ্রামের এক বাসিন্দা। কিডনি দাতা এবং গ্রহীতার সমস্ত মেডিক্যাল তথ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের দ্বারস্থ হন হাবিবুর। অভিযোগ, কোনও কারণ ছাড়াই আবেদন খারিজ করে স্বাস্থ্য দফতর। এরপরেই হাই কোর্টে মামলা করেন হাবিবুরের স্ত্রী শাহনাজ বেগম।
মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম এবং গোপা বিশ্বাস আদালতকে জানিয়েছিলেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন অনুযায়ী, স্বাস্থ্য দফতরে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। কোনও কারণ না দেখিয়েই সেই আর্জি বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারপতি সিংহ জানান, মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী রক্তসম্পর্ক না থাকলেও অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায়, যদি উভয় পক্ষ স্বেচ্ছায় সম্মত থাকে এবং কোনও আর্থিক লেনদেন না থাকে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের কোনও প্রমাণ মেলেনি জানিয়ে আদালতের নির্দেশ— অন্য কোনও আইনি বাধা না থাকলে হাবিবুর দাতার কাছ থেকে কিডনি গ্রহণ করতে পারবেন। ঘটনাচক্রে, মধ্যমগ্রামের ওই দাতা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তিনি এগিয়ে এসেছেন শাহনাজের স্বামীর প্রাণরক্ষায়।