নিউটাউনে ছাত্রের হাড়হিম হত্যাকাণ্ড। এবার মুক্তিপণের দাবিতে বন্ধুদের হাতেই বন্ধু খুন। নিট প্রস্তুতি নিতেই কলকাতায় পড়াশোনা করতে আসে মালদার ছাত্র। কালিয়াচক থানার ষোলো মাইল এলাকার বাসিন্দা এই মেধাবী ছাত্র। মহিষবাথানে ৬ মাস ধরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিল। খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৪ জনকে আটক করেছে নিউটাউন থানার পুলিস। আই ফোন, দামী গ্যাজেট হাইলাইফ স্টাইল সেসব দেখে বন্ধুদের ধারণা হয় প্রচুর পয়সা। বৃহস্পতিবার সাজিদের ফোন থেকে বাবার কাছে ফোন যায়। ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে হোয়াটসঅ্যাপ কল। সেই কলেও একই দাবি। তারপরেই শুক্রবার সকালে তারুলিয়ায় বন্ধুর বাড়ি থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়। খাটের নীচে সুটকেসে উদ্ধার হয় পড়ুয়ার দেহ।
১৯ বছরের সাজিদ হোসেনের বাবা মোক্তার হোসেন সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী। মেধাবী ছাত্র সাজিদ নিট পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নিউটাউনের একটি প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হয়েছিল। ৬ মাস আগে কলকাতায় এসে মহিষ বাথান এলাকার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সে একাই থাকত। এই ফ্ল্যাটের ঠিক নিচে গৌতমের ফাস্ট ফুডের দোকান। সেখান থেকেই আলাপ ও পরে বন্ধুত্ব। সাজিদের হাই লাইফ স্টাইল, হাতে আই ফোন, সঙ্গে থাকা বহুমূল্য গ্যাজেট এবং তার মোবাইলে পেমেন্ট অ্যাপে বাড়ি থেকে পাঠানো প্রচুর অঙ্কের টাকা তাকে গৌতম ও তার বন্ধুদের কাছে ঈর্ষার পাত্র এবং সফট টার্গেট করে তুলেছিল।
ঘটনার রাতে সাজিদের কাছে বাবার পাঠানো মোটা টাকার ট্রানজাকশন দেখতে পায় গৌতম। সেই সময় সাজিদ তার বাড়িতেই হুল্লোড় ফুর্তি করতে গিয়েছিল। টাকা ঢোকার পরেই সেই টাকা চাওয়া হয়। রাজি না হলে হুমকি দেওয়া হয়। এরপর জোর করে সেলোটেপ দিয়ে মুখ নাক বেঁধে তোলা হয় স্টিল ছবি। সূত্রের খবর, মদ খাইয়ে বালিশ চাপা দিয়ে প্রথমে খুন। তারপরে মুখে সেলোটেপ জড়িয়ে দেয় মৃত্যু নিশ্চিত করতেই। পুলিসি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার গৌতমের।
৪ অক্টোবর রাতে সাজিদের বাবা মোক্তার হোসেনের ফোনে সাজিদের মোবাইল থেকেই একটি ফোন আসে। তারপর আসে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ। যেখানে একটি স্টিল ছবিতে সাজিদের মাথা ও মুখ সেলোটেপ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। ঠিক ৩ মিনিটের মাথায় সেই ছবি ডিলিট করে দেওয়া হয়। এরপর হোয়াটসঅ্যাপ কলে বাবাকে ফোন করে জানানো হয় সাজিদকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। সেই টাকা দিতে অস্বীকার করায় ফোনেই সাজিদের প্রাণনাশের হুমকি দেয় ওই ব্যক্তি। সঙ্গে সঙ্গে নিউ টাউন থানায় ফোন করে মোক্তার গোটা বিষয়টি জানান। পুলিস ৪ অক্টোবর গোটা রাত বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালায়। সেই সময় মহিষবাথান এলাকার একটি ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁর মালিক, আদতে বিহারের বাসিন্দা, নিউ টাউনের তারুলিয়া এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকা গৌতম সিং এর সঙ্গে পুলিসের কথা হয়।
গৌতম পুলিসকে বিভ্রান্ত করার জন্য সাজিদের সম্ভাব্য ৪ টি ভুল লোকেশন দেয়। পুলিস সেগুলির খোঁজ করতে শুরু করে। এরপরই গৌতম খুব সম্ভবত আর শেষ রক্ষা করা যাবে না অনুমান করে ভয় পেয়ে যায়। তখনই সাজিদকে খুন করে তার দেহ দুমড়ে মুচড়ে একটি বড় সুটকেসে ঢুকিয়ে তা খাটের তলায় লুকিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকেই গতকাল ভোর রাতে দেহ উদ্ধার করে পুলিস। উদ্ধারের ক্ষেত্রে সাজিদের সুইচ অফ থাকা আই ফোনের লাস্ট টাওয়ার লোকেশন কাজে লেগেছে বলে পুলিস সূত্রে খবর। এরপর গৌতম সিং ও তার ৩ বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিউটাউন থানার পুলিস।
পুলিস জানতে পেরেছে মুক্তিপণ চাওয়ার আগেই খুন। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান টাকা পয়সা সংক্রান্ত বিষয়েই খুন। এই ঘটনায় আটক ৬ জন, ৪ বন্ধু ও ২ বান্ধবী। অভিযুক্ত গৌতম ৩টি ঘর ভাড়া নিয়ে রেখেছিল। যেখানে বন্ধুদেরকে নিয়ে পার্টি করত। গৌতমের একটি রেস্তরাঁও রয়েছে বলে পুলিস সূত্রে খবর।