বরুণের স্পিনের ফাঁদে নিউ জ়িল্যান্ড শেষ ২০৫ রানে, অপরাজিত থেকে সেমিতে খেলবে ভারত

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠল অপরাজিত ভারত। বাংলাদেশ, পাকিস্তানের পর জয় নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধেও। রবিবার ভারত জিতল ৪৪ রানে। পাঁচ উইকেট নিলেন বরুণ চক্রবর্তী। ভারত প্রথমে ব্যাট করে ২৪৯ রান করে। নিউ জ়িল্যান্ড শেষ হয়ে গেল ২০৫ রানে।

রবিবার শুরুতে নিউ জ়িল্যান্ডের ফিল্ডিংয়ের দাপট দেখল দুবাই। যে মাঠ বিখ্যাত ক্যাচ পড়ার জন্য, সেই মাঠেই একের পর এক ক্যাচ নিলেন গ্লেন ফিলিপ্সেরা। আর সেই ফিল্ডিংয়ের দাপটে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারাল ভারত, আটকে গেল রানও। ভারত ফিল্ডিং করার সময় যদিও ফিল্ডিংয়ে সেই দাপটে দেখা যায়নি। দেখা গেল বরুণদের স্পিনের ফাঁদ। যে ঘূর্ণিতে একের পর এক ভুল করতে বাধ্য হলেন নিউ জ়িল্যান্ডের ব্যাটারেরা। ব্যতিক্রম শুধু কেন উইলিয়ামসন (৮১)।

নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে হর্ষিত রানার জায়গায় বরুণকে দলে নেয় ভারত। দুবাইয়ের পিচে স্পিনারেরা সাহায্য পাচ্ছেন। সেটা মাথায় রেখে রবিবার চার জন স্পিনারকে নিয়ে খেলে ভারত। সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তা প্রমাণ হয়ে গেল ম্যাচ শেষে। বরুণ একাই পাঁচ উইকেট তুলে নিলেন। দু’টি উইকেট নেন কুলদীপ যাদব। একটি করে উইকেট তুলে নেন রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেল এবং হার্দিক পাণ্ড্য। নিউ জ়িল্যান্ডের হয়ে পেসারেরা সাতটি উইকেট নিয়েছিলেন। ভারতের স্পিনারেরা নিলেন ন’টি উইকেট।

৩০ রানের মধ্যে ভারতের শুভমন গিল (২), রোহিত শর্মা (১৫) এবং বিরাট কোহলি (১১) আউট হয়ে যান। এর মধ্যে শুভমন এলবিডব্লিউ হন। রোহিত পুল মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে বসেন। কিন্তু কোহলিকে আউট করার নেপথ্যে ছিলেন ‘বাজপাখি’ ফিলিপ্স।

কোহলির ৩০০তম ম্যাচ দেখতে গিয়েছেন স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা। তাঁর অভিনীত ছবির গান বিভিন্ন বাজতে থাকল দুবাইয়ের মাঠে। কিন্তু সেই ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না ব্যাটার কোহলি। বলা ভাল, তাঁকে স্মরণীয় করে রাখতে দিলেন না ফিলিপ্স। দুবাই স্টেডিয়ামে সপ্তম ওভারটি করছিলেন ম্যাট হেনরি। চতুর্থ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে ছিল। কোহলি সপাটে ব্যাট চালান। ফিলিপ্স বাদ দিয়ে অন্য কেউ থাকলে হয়তো বল বাউন্ডারিতে চলে যেত। পয়েন্টে ফিল্ডিং করছিলেন তিনি। তাঁর ডান দিকে বল ছিল। বল লক্ষ্য করে হাত বাড়িয়ে লাফ মারেন ফিলিপ্স। বল তালুবন্দি করার সময় তাঁর পা মাটি ছেড়ে উঠছে। প্রায় হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন শরীর। কোহলির ব্যাটে বল লাগার পর মাত্র ০.৬৮ সেকেন্ডের মধ্যে বল ফিলিপ্সের কাছে আসে। তিনি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, বলটি ধরলেন তার থেকে একটু পিছনে। খুব সহজ ছিল না ক্যাচটা। কিন্তু ফিলিপ্স থাকলে সব ক্যাচই সহজ।

ভারতের গোটা ইনিংস জুড়েই নিউ জ়িল্যান্ডের ফিল্ডারদের দাপট দেখা যায়। কেন উইলিয়ামসন বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে রবীন্দ্র জাডেজার ক্যাচ নিয়েছিলেন। সেটিও ম্যাচের অন্যতম সেরা ক্যাচ হয়ে থেকে যাবে। ফিলিপ্স তবুও ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ছিলেন, কিন্তু উইলিয়ামসন ডানহাতি হয়েও বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নিশ্চিত চার বাঁচিয়ে দেন নিউ জ়িল্যান্ডের ফিল্ডারেরা।

ভারতের হয়ে রান করেন শ্রেয়স আয়ার (৭৯)। তিনি এবং অক্ষর পটেল মিলে ৯৮ রানের জুটি গড়েন। যে সময় মনে হচ্ছিল তাঁদের ব্যাটে ভর করে ভারত বড় রান করবে, সেই সময় অক্ষর হঠাৎ উইকেটের পিছন দিকে মারতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে থাকা উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। উইলিয়ামসন কিছুটা পিছন দিকে দৌড়ে গিয়ে ক্যাচ ধরেন। কিন্তু অক্ষর (৪২) ওই সময় হঠাৎ কেন পিছন দিকে খেলতে গেলেন তা বোঝা মুশকিল।

শেষ দিকে হার্দিক পাণ্ড্য (৪৫) কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সঙ্গী পেলেন না তিনি। লোকেশ রাহুল (২৩) এবং রবীন্দ্র জাডেজা (১৬) শুরুটা ভাল করলেও শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলেন না। তবে ৪৯তম ওভারে কাইল জেমিসনকে হার্দিক দু’টি চার এবং একটি ছক্কা না মারলে আরও কম রানে থেমে যেত ভারত।

স্কোরবোর্ড দেখাবে হেনরি রবিবার পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন। তবে এর মধ্যে দু’টি উইকেটের পুরো কৃতিত্ব ফিলিপ্স এবং উইলিয়ামসনের। তাঁরা অবিশ্বাস ক্যাচ না নিলে আউটগুলি হত না। একটি করে উইকেট নিয়েছেন জেমিসন, উইল ও’রোর্ক, মিচেল স্যান্টনার এবং রাচিন রবীন্দ্র।

রবিবারের জয় ভারতের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমে বল করেছিল ভারত। রান তাড়া করার সুবিধা পেয়েছিলেন কোহলিরা। রবিবার সেটা হয়নি। প্রথমে ব্যাট করতে হয়েছিল ভারতকে। কিন্তু সেই ম্যাচও জিতে নিল তারা। স্পিনারদের দাপটে ম্যাচ ভারতের পকেটে। যা সেমিফাইনালের আগে ভারতকে সব রকম পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.