তালি কখনও এক হাতে বাজানো যায় না! একটি ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তকে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়ে এমন মন্তব্যই করল দেশের শীর্ষ আদালত। ৪০ বছর বয়সি এক নারীকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ২৩ বছর বয়সি এক তরুণ। গত ৯ মাস ধরে অভিযুক্ত জেলবন্দি রয়েছেন। এত দিনেও তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন না-হওয়ার অভিযুক্তকে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আদালত। ওই মহিলা যে ‘বাচ্চা’ নন, সে কথাও জানিয়েছে আদালত।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল। অভিযুক্ত তরুণ এক সমাজমাধ্যম প্রভাবী। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, অভিযোগকারী মহিলা স্বেচ্ছায় অভিযুক্তের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে ওই তরুণের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করা হল, তা নিয়েও দিল্লি পুলিশকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় আদালতে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, “তালি এক হাতে বাজে না! কিসের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় মামলা করা হল? তিনি কোনও বাচ্চা নন। মহিলার বয়স ৪০ বছর। তাঁরা এক সঙ্গে জম্মুতে গিয়েছিলেন। কেন ৩৭৬ ধারায় মামলা হয়েছে? ওই মহিলা সাত বার জম্মুতে গিয়েছেন, তাঁর স্বামীর তো সেটি নিয়ে কোনও হেলদোল নেই।”
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যে হেতু অভিযুক্ত ৯ মাস ধরে জেলে রয়েছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনও চার্জ গঠন হয়নি, তাই তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া উচিত। তরুণকে অন্তর্বর্তী জামিনের নির্দেশ দিয়ে আদালত জানিয়েছে, অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত থাকাকালীন কোনও ভাবেই অভিযোগকারী মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না বলে আদালতের নির্দেশ।
২০২১ সালে সমাজমাধ্যমে অভিযুক্তের সঙ্গে আলাপ হয় মহিলার। মহিলার দাবি, নিজের বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য অভিযুক্তের সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি। ওই সাহায্য করার জন্য অভিযুক্ত একটি আইফোন চেয়েছিলেন তাঁর কাছে। জম্মুর একটি দোকান থেকে মহিলা সেই আইফোনটি অভিযুক্তকে কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু আইফোনটি অভিযুক্ত অন্য কাউকে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করলে উভয়ের সম্পর্কে তিক্ততা আসে। পরে অভিযুক্ত ওই মহিলার নয়ডার বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চান এবং ওই বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের জন্য শুট করতে রাজি হয়ে যান। সেই মতো দিল্লির কনাট প্লেসে গিয়েছিলেন দু’জনে। মহিলার অভিযোগ, সেখানেই মাদক মেশানো মিষ্টান্ন খাইয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন অভিযুক্ত এবং আপত্তিকর ছবি তোলেন। পরে ভয় দেখিয়ে তাঁকে জম্মুতে নিয়ে গিয়ে অভিযুক্ত ধর্ষণ করেন বলেও পুলিশকে জানিয়েছেন মহিলা।
মামলায় গ্রেফতারির পর জামিনের আর্জিতে প্রথমে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযুক্ত। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আর্জি জানান তিনি। বুধবার শীর্ষ আদালত থেকে অভিযুক্তের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর হয়েছে।