আজ বিজ্ঞানের সবচেয়ে আকর্ষক গবেষণা চলছে God particle (ঈশ্বর-কণা) নিয়ে। এই নাম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরাই। ফিজিকসে অবশ্য বলা হয় হিগ্স-বোসন (সত্যেন বোসের পদবী থেকেই বোসন)। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আদি কণা যা থেকে সৃষ্টি। তারই খোঁজ চলছে।
এই গবেষণার প্রধান কেন্দ্র সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে। অফিসিয়াল নাম CERN, ৭৯৩১ জন বিজ্ঞানী কাজ করছেন এখানে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিজিক্স ল্যাবরেটরি এই বিল্ডিংয়ের সামনে স্থাপিত হয়েছে শিবের নটরাজ মূর্তি। গত বছর শিবরাত্রিতে। বিজ্ঞান গবেষণায় ধর্মীয় মূর্তি কেন? ১৯৭৫ সালে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ফ্রিটজফ কাপ্রা বলেছিলেন, ফিজিক্স অনুযায়ী শিবের নাচই অতিপরমাণবিক পদার্থের স্পন্দন। তিনি লেখেন: The dance of Shiva is the dancing universe, the ceaseless flow of energy going through an infinite variety of patterns that melt into one another.
গবেষণা যতই এগিয়ে গেল বিজ্ঞানীরা এ কথার তাৎপর্য বুঝতে পারলেন। অনুভব করলেন যে এই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি-রহস্য লুকিয়ে আছে নটরাজ শিবের প্রতীকে। নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী শ্রডিঞ্জার ঘোষণা করেন, বিজ্ঞানীদের যে দ্বন্দ্ব দেখি পদার্থ ও চেতনা নিয়ে এর সমাধান লুকিয়ে আছে উপনিষদের প্রাচীন প্রজ্ঞায়।
এগিয়ে এলেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীরা। বোহম, উইগনার, ওপেনহাইমার, জোসেফসন, সাগান, হুইলার, হেগ্লিস, বেলিজ প্রমুখ। তাদের বক্তব্য — উপনিষদ কথিত চেতনাই শ্রেষ্ট উত্তর এ কম্পনশীল বিশ্বব্রহ্মান্ড ও ক্ষুদ্রতম কণার। ওপেনহৈমার লিখলেন: আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে (Physics) যা পাওয়া যাচ্ছে তা প্রাচীন হিন্দু প্রজ্ঞারই প্রতিফলন।
আজ তাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিজিক্স ল্যাবরেটরি, আধুনিক বিজ্ঞানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কেন্দ্র CERN-এর সামনে বিজ্ঞানীরা স্থাপন করলেন নটরাজের মূর্তি।
কিন্তু পাশ্চাত্য বিজ্ঞানীরা নটরাজ মুর্তিকে ব্যাখ্যা করছেন কিভাবে? তাদের ব্যাখ্যার সাথে হিন্দু শাস্ত্রের অপূর্ব মিল রয়েছে।
নটরাজ শিবের এক হাতে আগুণ (ধ্বংস), অন্য হাতে ডমরূ (এর শব্দ অনাহত নাদ ॐ) সৃষ্টি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, energy কি তা কেউ জানে না। বিমূর্ত, বস্তু-নিরপেক্ষ। এনার্জি (শক্তি) ছাড়া মহাবিশ্ব শুধুই অলীক কণিকা (particle) যাদের কোনো স্থায়ী অস্তিত্ব নেই। কোয়ান্টাম ফিল্ড থেকে এই কণাগুলি উঠছে, আবার মিশে যাচ্ছে। সৃষ্টি ও ধ্বংস (ডমরু ও আগুণ)।
মৌল কণা কিন্তু সবকিছুর উৎস নয়। এর গভীরে অন্তর্নিহিত ক্ষেত্র রয়েছে। ঐ ক্ষেত্র থেকে সৃষ্টি হয়েছে মূল চারটি শক্তি। নটরাজের এক পা উপরে, অর্থাৎ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও অন্য তিন শক্তির উপরে। ঐ পা থেকেই মূল চার শক্তির উৎপত্তি। তাঁর আরেক পা নীচে, মানুষের উপর (ছবি দেখুন)। এর অর্থ, মূল শক্তিগুলি মানুষের কল্পনা, রহস্যময় অস্তিত্ব এগুলির। শিবের পায়ের নীচে ঐ মানুষের এক হাত সামনে অন্য হাত মাটিতে। অর্থাৎ জাগতিক দৃষ্টিতে এই শক্তিগুলি আছে মনে হলেও গভীর দৃষ্টিতে এ যেন আলোর ঝলকানি। রামধনুর মতো, আছে অথচ নেই।
তাহলে কি রয়েছে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, আদি ক্ষেত্র (field) অব্যক্ত বা pre-space. কারণ সেখানে আকাশ নেই, সময় নেই। নটরাজ মূর্ত বা প্রকাশিত যখন নাচেন, কিন্তু ধ্যানস্থ অবস্থায় অব্যক্ত (তখন তিনি শিব)।
নটরাজের জটা ছড়িয়ে পড়েছে। এর অর্থ? ডেভিড বোহম ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে — মহাবিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড অখণ্ড, প্রতিটি বস্তু একে অন্যের সাথে যুক্ত রয়েছে (implicate order)। [ছবিতে দেখুন]
চতুর্ভুজ নটরাজের দুই হাত নিয়ে বলা হয়েছে। বাকি দুই হাত, একটি উপরে দেখাচ্ছে অন্যটি নীচের দিকে, নৃত্যের ছন্দে। অর্থাৎ নীচ থেকে (জাগতিক দৃষ্টিতে) দেখলে মৃত্যু, উপর থেকে কিন্তু জন্ম। তুমি দেখছ মৃত্যু, ধ্বংস, কিন্তু আসলে এটা রূপ পরিবর্তন। শক্তির ক্ষয় নেই, সৃষ্টিও নয়, বিজ্ঞান বলে। নটরাজ এই সত্যকেই তুলে ধরছেন। মূল অব্যক্ত ক্ষেত্র (বিজ্ঞানের ভাষায় field) স্থির হয়েও নানা রূপ নিচ্ছে প্রতিক্ষণ।
এভাবেই নটরাজকে ব্যাখ্যা করছেন বিজ্ঞানীরা। হিন্দুধর্মের মধ্যে প্রতীক রূপে খুঁজে পেয়েছেন আধুনিক বিজ্ঞানের গভীর সত্যকে।
পূর্ব প্রকাশিত পোষ্ট - সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত
সুস্বাগতম ফেসবুক গ্রুপঃ স্বামী সোমেশ্বর অনুধ্যান
https://www.facebook.com/groups/249707259636878/?ref=share