আগামী ১২ তারিখ (বুধবার) আমেরিকায় যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দু’দিনের সফরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎও করবেন তিনি। মোদীর দু’দিনের মার্কিন সফরের কথা জানাল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। অবৈধবাসী ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো, ভারতের উপর শুল্ক চাপানোর ট্রাম্পে হুমকি— এই আবহে মোদী সফর খপবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমেরিকা সফরের সূচি ঘোষণা করলেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প শপথ নেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সে দেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। যা দু’দেশের সুসম্পর্কেরই প্রতিফলন। ভারত এবং আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলেই জানিয়েছেন বিদেশসচিব। জানা গিয়েছে, আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহেই আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তার পরই মার্কিন সফরে যাচ্ছেন মোদী।
গত ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়েছে ট্রাম্পের। সেখানে মোদীর প্রতিনিধি হিসাবে হাজির ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। গত ৭ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পরেই তাঁকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মোদী। গত ২৭ জানুয়ারি ট্রাম্প ফোন করেছিলেন মোদীকে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে দু’জনের দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল। পরের দিন ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ফেব্রুয়ারিতেই মোদীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হতে পারে। কবে মোদী আমেরিকায় যেতে পারেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর সূচি ঘোষণা করল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত স্তরেও সম্পর্ক বেশ মসৃণ। প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্পের শেষ বিদেশ সফর ছিল ভারতে। ২০১৬-২০ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন ট্রাম্প বারে বারেই মোদীকে ‘বন্ধু’ বলেছেন। ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে টেক্সাসের হিউস্টনে ছিল ‘হাউডি মোদী’ সভা। সেখানে প্রায় ৫০ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও প্রবাসী ভারতীয়ের সামনে কূটনীতির বেড়া টপকে ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দিয়েছিলেন মোদী। ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে দু’দিনের ভারত সফরে এসে গুজরাতের মোতেরায় মোদীর নামাঙ্কিত পুনর্নির্মিত ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন ট্রাম্প এবং তৎকালীন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই ট্রাম্প বেশ কিছু নীতিগত পরিবর্তনের কথা বলতে শুরু করেন। কুর্সিতে বসার পর পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। তিনি ঘোষণা করেন, আমেরিকার স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা হবে। তার পর ভাবা হবে অন্য দেশের কথা! সেই লক্ষ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপও করতে শুরু করেছে তাঁর সরকার।
পড়শি মেক্সিকো, কানাডা এবং আমেরিকার বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী চিনের বিরুদ্ধে নতুন শুল্কনীতি প্রয়োগের সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী নিশানা কারা হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা তৈরি হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই তালিকায় রয়েছে ভারতের নামও। কারণ, আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট যে দেশগুলির পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক বসিয়েছেন তাদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ওয়াশিংটনের। ঘটনাচক্রে, ভারতের ক্ষেত্রেও রয়েছে ঘাটতি। যদিও ভারতের উপর এখনই অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর ব্যাপারে মুখ খোলেননি ট্রাম্প। অনেকেই দাবি করছেন, মোদীর সঙ্গে তাঁর ‘বন্ধুত্বে’র কারণেই বিষয়টি নিয়ে ‘চুপ’ আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে আমেরিকায় থাকা অবৈধবাসী ভারতীয়দের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রথম দফায় ১০৪ জন ভারতীয়কে আমেরিকা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ভারতের বিদেশসচিবের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন ৪৮৭ জন অবৈধবাসী ভারতীয়কে পাঠাবে বলে জানিয়েছে। সেই আবহে মোদী যাচ্ছেন আমেরিকায়। এই সফরে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়, সে দিকেই তাকিয়ে সকলে।