গোল করে নজির সুনীলের, ব্যর্থ মোহনবাগানের রক্ষণ, বেঙ্গালুরুর কাছে হারল ‘মাথাভারী’ সবুজ-মেরুন

গোল করার লোক একগাদা। গোল বাঁচানোর লোক নেই। ডুরান্ড কাপ থেকেই মোহনবাগানের খেলা দেখে এই প্রশ্ন বার বার উঠেছে। তখনই লেগে গিয়েছিল ‘মাথাভারী’ তকমা। ডুরান্ড ফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেড দেখিয়ে দিয়েছিল মোহনবাগানের দুর্বলতা। শনিবার বেঙ্গালুরু এফসি মোহনবাগানের সেই রক্ষণ ভাগকে বেআব্রু করে দিল। বেঙ্গালুরু জিতল ৩-০ ব্যবধানে। গোল করে আইএসএলে নজির তৈরি করলেন সুনীল ছেত্রী। সবচেয়ে বেশি গোল তাঁরই নামের পাশে।

হোসে মোলিনার প্রথম একাদশ বিস্ময় জাগাতে বাধ্য। প্রথম একাদশে দিমিত্রি পেত্রাতোস, জেসন কামিংস, গ্রেগ স্টুয়ার্ট-সহ আক্রমণ ভাগের প্রায় সব বিদেশিকেই নামিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে রক্ষণের ভার ছিল অনভিজ্ঞ দীপেন্দু বিশ্বাস, অভিষেক সূর্যবংশী, আশিস রাইদের উপরে। ফল যা হওয়ার তাই হল। শুরু থেকেই অ্যালবার্ট নগুয়েরা, এডগার মেন্ডেজ়রা একটানা আক্রমণ শুরু করলেন। বিশাল কাইথ না থাকলে মোহনবাগান আরও গোল খেত। গোটা ম্যাচে মোহনবাগানের রক্ষণকে খুঁজে পাওয়া গেল না।

শুরুতেই বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রিকিক পেয়েছিল বেঙ্গালুরু। নগুয়েরাকে ফাউল করেন অভিষেক। তবে বিনীতের সরাসরি ফ্রিকিক বিশাল বাঁচানোর পর তা কর্নার করে দেন টম অলড্রেড। তার কিছু ক্ষণ পরেই পেত্রাতোসের নিচু হয়ে নামা ফ্রিকিক শরীর ঝাঁপিয়ে বাঁচান গুরপ্রীত।

৯ মিনিটে গোল খেয়ে যায় মোহনবাগান। কর্নার থেকে সরাসরি গোল করেন মেন্ডেজ়। এর পরে দুই দলের খেলাতেই আক্রমণ লক্ষ করা যায়। তবে মোহনবাগানের তুলনায় বেঙ্গালুরুর আক্রমণের তীব্রতা ছিল বেশি। ২০ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে বেঙ্গালুরু। ডান প্রান্ত থেকে বল ধরে এগিয়ে গিয়েছিলেন মেন্ডেজ়। বক্সে নিচু ক্রস করেছিলেন। ছুটতে থাকা সুনীল তা ধরতে পারেননি। তার পায়ে লেগে বল যায় সুরেশ সিংহ ওয়াংজামের দিকে। সুরেশ সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিলেন। দৌড়ে এসে জোরালো শটে বিশালকে পরাস্ত করেন। তার পরেই মাঠের ধারে গিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো সেলিব্রেশন করতে দেখা যায় তাঁকে।

তিন মিনিট পরে আবার গোল খেতে পারত মোহনবাগান। রক্ষণের ভুলের সুযোগ নিয়ে প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন সুনীল। অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। বিরতির আগে আরও একটি গোল করতে পারত বেঙ্গালুরু। বিনীত হয়ে সুনীল ঘুরে বল পেয়েছিলেন নগুয়েরা। তার শট বাঁচিয়ে দেন বিশাল।

বিরতির পাঁচ মিনিট পরেই তৃতীয় গোল খায় মোহনবাগান। এ ক্ষেত্রেও ভুল সেই রক্ষণের। বল পেয়ে মোহনবাগানের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন মেন্ডেজ়‌। তাঁকে ট্যাকল করতে চেয়ে ব্যর্থ হন দীপেন্দু। এর পর মেন্ডেজ়ের জার্সি ধরে ফেলে দেন। রেফারি পেনাল্টি দিতে দেরি করেননি। এক পা দৌড়ে শট নিয়ে বিশালকে পরাস্ত করে আইএসএলের ৬৪তম গোল করেন সুনীল।

দ্বিতীয়ার্ধে অভিষেকের জায়গায় সাহালকে নামিয়েছিলেন মোলিনা। তৃতীয় গোল খাওয়ার পরে আশ্চর্যজনক ভাবে সেই সাহালকে তুলে নেন। তত ক্ষণে ১০ মিনিটও মাঠে কাটাননি। রিজ়ার্ভ বেঞ্চে বসে সাহাল বিরক্ত গোপন করতে পারেননি। দীপেন্দুর জায়গায় নামান অনিরুদ্ধ থাপাকে। ৭২ মিনিটের মাথায় সুনীলকে তুলে নেন বেঙ্গালুরুর কোচ জেরার্ড জারাগোজা। গোটা কান্তিরাভা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে সম্মান জানায় তাঁকে।

খেলার শেষ দিকে নিজেদের ভুলে চতুর্থ গোল করতে পারেনি বেঙ্গালুরু। বাঁ দিক থেকে সুরেশের পাস পেয়েছিলেন শিবশক্তি নারায়ণ। তিনি গোল করতে পারেননি। বিশালের হাত সে যাত্রায় বাঁচিয়ে দেয় মোহনবাগানকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.