মুর্শিদাবাদ: ‘গোয়েন্দা ব্যর্থতা’ নিয়ে মুখ খুলল রাজ্য পুলিশ! অশান্তি নেই, বহু দোকানপাট খুলেছে, জানালেন সুপ্রতিম

গোয়েন্দা ব্যর্থতার জেরে মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে রাজ্যপুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। তদন্তকারী দলের প্রথম বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম। বৃহস্পতিবার রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার সেই মর্মে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘গোয়েন্দা ব্যর্থতা কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’’

মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনার তদন্তে বুধবারই সিট গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। বুধবার রাতের মধ্যেই মুর্শিদাবাদে পৌঁছে যান সিটের কয়েক জন সদস্য। পুলিশ সূত্রের খবর, সুতি থানায় তাঁরা একটি বৈঠক করেন। পরে রাতে শমসেরগঞ্জ থানায় আবার বৈঠক হয়। সুপ্রতিম জানান, রাজ্য সরকার গঠিত সিটের নেতৃত্ব দেবেন মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ ওয়াকার রাজা। পাশাপাশিই তিনি জানান, অশান্তির ঘটনায় সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৬০টি এফআইআর রুজু হয়েছে। সমস্ত অভিযোগেরই তদন্ত করবে সিট। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে ২৭৪ জনকে। সুপ্রতিম জানিয়েছেন, গত চার দিনে জেলায় নতুন করে অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। শমসেরগঞ্জ, সুতি এবং ধুলিয়ানের মতো উপদ্রুত এলাকায় বৃহস্পতিবার ৭০ শতাংশ দোকানপাট খুলে গিয়েছে। শুক্র বা শনিবারের মধ্যে বাকি দোকানও খুলে যাবে।

ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে অশান্তির আবহে গত শুক্রবার মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে আগেই দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সুপ্রতিম জানান, খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ওই যুবককে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ গ্রেফতার করেছে সুতি থানা এলাকার সুলিপাড়া থেকে। ধৃত প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করেছিল। খুনের ঘটনার পর এলাকায় বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করা এবং বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছিল সে।’’ এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিমের আশ্বাস, ‘‘যারা খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের সকলকেই ধরা হবে। কেউ রেহাই পাবে না। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে রাজ্য পুলিশ।’’

বৃহস্পতিবার সিটের কয়েক জন সদস্য জাফরাবাদের দুই নিহতের বাড়িতে গিয়েছিলেন। গিয়েছিল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ১০ সদস্যের একটি দলও। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার আনন্দ রায় বলেন, ‘‘ওই দলটিতে ফিজ়িক্স, কেমিস্ট্রি এবং বায়োলজি বিশেষজ্ঞেরা রয়েছেন। ওই দলটি এবং সিটের তদন্তকারীরা জাফরাবাদে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। কথা বলেছেন মৃতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।’’

ঘরছাড়াদের বাড়ি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রতিম। অশান্তির জেরে শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ান এবং সুতির অনেক বাসিন্দা গঙ্গা পেরিয়ে মালদহে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সুপ্রতিম জানিয়েছেন, তাঁদের ৮৫ জনকে ইতিমধ্যেই জেলায় নিজেদের এলাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেও আরও কয়েক জন ফিরিয়ে আনা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা ঘর ছেড়েছেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে যাতে তাঁরা আবার আগের মতো সুস্থ ভাবে জীবনযাপন করতে পারেন নিজেদের বাড়িতে, পুলিশ সেই ব্যবস্থা করবে। দু’একদিনের মধ্যেই সকলকে ফিরিয়ে আনা হবে। ওখানে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প বসেছে। ফলে কারও ভয়ের কারণ নেই।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.