সিরাজের ৬ উইকেট, ব্রুক-স্মিথের জুটি সামলে শেষ দু’ঘণ্টায় আবার ম‍্যাচে ফিরলেন শুভমনেরা, ভারত এগিয়ে ২৪৪ রানে, হাতে ৯ উইকেট

তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় ওভারেই পর পর দু’বলে আকাশদীপের জোড়া উইকেট।

পরের ৬১ ওভারে হ্যারি ব্রুক এবং জেমি স্মিথের ৩০৩ রানের জুটি।

নতুন বল হাতে নিয়েই ব্রুককে আউট করে জুটি ভাঙলেন আকাশদীপ।

শেষে সিরাজের ধাক্কা। ২০ রানে ৫ উইকেট হারাল ইংল্যান্ড।

ভারত-ইংল্যান্ড এজবাস্টন টেস্টের তৃতীয় দিন ম্যাচের রং বদলাল বারে বারে। কখনও শুভমন গিলেরা দাপট দেখালেন। আবার কখনও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারেরা। দিনের শেষে অবশ্য সুবিধাজনক জায়গায় থাকল ভারত। শুভমনদের প্রথম ইনিংসে তোলা ৫৮৭ রানের জবাবে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ হল ৪০৭ রানে। ছ’জন ইংরেজ ব্যাটার শূন্য রানে আউট হলেও ৪০০-র উপর রান করল ইংল্যান্ড। দিনের শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের রান ৬৪/১। সব মিলিয়ে ভারত এগিয়ে ২৪৪ রানে, হাতে ৯ উইকেট।

দিনের শুরুতেই ইংল্যান্ডকে জোড়া ধাক্কা দিয়েছিলেন সিরাজ। পর পর দু’বলে জো রুট এবং বেন স্টোকসকে আউট করে ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলে দেন তিনি। ৮৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ঘরের মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়া ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফেরায় ষষ্ঠ উইকেটে ব্রুক এবং স্মিথের ৩০৩ রানের জুটি। ব্রুক খেললেন ১৫৮ রানের ইনিংস। স্মিথের ব্যাট থেকে এল ১৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। সঙ্গীর অভাবে দ্বিশতরান করতে পারলেন না তিনি। তবে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ করে ভারতকে তৃতীয় দিনের শেষে সুবিধাজনক জায়গায় রাখলেন সিরাজ এবং আকাশদীপ।

ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের স্কোর।

সিরাজের তৈরি করা চাপ ভারত বজায় রাখতে পারল না অন্য বোলারদের ব্যর্থতায়। বিশেষ করে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং ওয়াশিংটন সুন্দর প্রত্যাশা অনুযায়ী বল করতে পারলেন না। প্রসিদ্ধ দেদার রান বিলোলেন। এই টেস্টের পর তাঁর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। যতই আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন, টেস্টে সাফল্য পেতে গেলে নিজের বোলিং নিয়ে অনেক খাটতে হবে তাঁকে। ইংল্যান্ডের ব্যাটারেরা তাঁকে আক্রমণ করছেন দেখেও একটানা শর্ট বল করে গেলেন। ফলে স্মিথ একের পর এক পুল মেরে রান তুললেন। প্রসিদ্ধের জায়গায় অর্শদীপকে কেন খেলানো হবে না, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠতেই পারে।

ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৩২তম ওভারে স্মিথ প্রসিদ্ধকে একটি ছক্কা এবং চারটি চার মারেন। একটি ওয়াইড বলও করেন। মোট ২৩ রান দেন। ভারতীয় বোলারদের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ব্রুক-স্মিথ জুটি ইংল্যান্ডকে ভাল জায়গায় নিয়ে চলে যান। সাবলীল ব্যাটিং করলেন দু’জনেই। ভারতের কোনও বোলারই সে সময় তাঁদের তেমন সমস্যায় ফেলতে পারেননি। ব্রুকের ইনিংসে রয়েছে ১৭টি চার এবং ১টি ছক্কা। স্মিথের ইনিংসে ২১টি চারের পাশাপাশি ৪টি ছয় রয়েছে। তাঁদের দাপটে বেশ চাপে পড়ে যায় ভারত।

দ্বিতীয় নতুন বল ভাল কাজে লাগালেন সিরাজ এবং বাংলার আকাশদীপ। তাতেই ইংল্যান্ডের শেষ ৫ উইকেট পড়ল ২০ রানে। আকাশদীপের বলে ব্রুক আউট হওয়ার পর দ্রুত ভেঙে পড়ল ইংরেজদের ইনিংস। ব্রুকের পর ক্রিস ওকসকেও (৫) আউট করেন আকাশ। ২২ গজের অন্য প্রান্ত থেকে সিরাজ পর পর আউট করেন ব্রাইডন কার্স (০), জশ টং (০) এবং শোয়েব বশিরকে (০)। তাতেই ৫ উইকেটে ৩৮৭ থেকে ৪০৭ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। বল হাতে অনেক দিন পর চেনা ছন্দে দেখা গেল সিরাজকে। ৭০ রানে ৬ উইকেট নিলেন তিনি। আকাশদীপ ৪ উইকেট নিলেন ৮৮ রান খরচ করে।

প্রথম ইনিংসে ১৮০ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ভারত। দিনের শেষে শুভমনদের রান ১ উইকেটে ৬৪। ২৮ রান করে আউট হয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল। ২২ গজে রয়েছেন লোকেশ রাহুল (২৮) এবং করুণ নায়ার (৭)। যশস্বীর আউট নিয়ে তৈরি হল নাটকীয় মুহূর্ত। টংয়ের বলে এলবিডব্লিউ হন যশস্বী। নির্দিষ্ট সময়ের (১৫ সেকেন্ড) মধ্যে ডিআরএসের আবেদন করতে পারেননি যশস্বী। তা নিয়ে আম্পায়ারদের কাছে অভিযোগ করেন স্টোকসেরা। তবু মাঠের আম্পায়ারেরা আলোচনা করে তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে পাঠান রিভিউয়ের জন্য। তবে তৃতীয় আম্পায়ারও ভারতীয় ওপেনারকে আউট দেওয়ায় বড় বিতর্ক তৈরি হয়নি।

এই টেস্টে ভারত জিততে না পারলে সেটা বোলারদের ব্যর্থতা হিসাবেই ধরতে হবে। কারণ, যশস্বী এবং রাহুল ঝড়ের গতিতে শুরু করে ওপেনিং জুটিতে ৫১ রান তুলে ফেলেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ ওবারে ৬৪ রান তুলেছে ভারত। রান রেট ৪.৯২। শনিবার মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর আরও ১ ঘণ্টা যদি ভারত ব্যাট করে, ৪০০ রানের লিড নিয়ে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠানো অসম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ম্যাচ বাঁচানোর জন্য চাপে থাকবেন ইংল্যান্ডের ব্যাটারেরা। তখন দেড় দিনে ইংল্যান্ডকে অল আউট করে ম্যাচ জেতার আশা করতেই পারে ভারত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.