বোনের বিয়ের টাকা জোগাড় করতে ভিন রাজ্যে পাড়ি! বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত দাদা

 স্বপ্ন ছিল ভিন রাজ্যে গিয়ে মোটা টাকা রোজগার করে ভালো করে বোনের বিয়ে দেবেন। পাকা বাড়ি ঘর বানাবেন। কিন্তু বোনের বিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভালো বাড়ি ঘর বানানোর ইচ্ছে আর পূরণ হল না তরুণ রায়ের। বোনের বিয়ের টাকা রোজগারের জন্যই তামিননাড়ুতে কাজে যাচ্ছিলেন জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির তরুণ। কিন্তু একটা সন্ধে সব হিসেব গোলমাল করে দিল। দুর্ঘটনায় মৃত তরুণের পিতা এখন কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না! অথৈ জলে পড়েছেন তাঁরা। দূর-দূরান্তের আত্মীয় পরিজনরা সবাই পৌঁছে গিয়েছেন তরুণের বাড়িতে। আজ রাতেই বাড়িতে পৌঁছাবে তরুণের নশ্বর দেহ। জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদরা।

আগামী অগ্রহায়ণ মাসে বোনের বিয়ে রয়েছে। তার আগে ঘর তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন দাদা তরুণ। বিয়ের খরচের জন্য জমাতে হবে মোটা অংকের টাকা। সেই উদ্দেশেই তামিলনাড়ুর এক বেসরকারি কোম্পানির গাড়ি চালানোর কাজে যোগদান করতে যাচ্ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের মাধবডাঙা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর মাধবডাঙার বাসিন্দা তরুণ রায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জামাইবাবু শৈলেন রায়। বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলেন তাঁরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটে যায় মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা। যার যেরে গুরুতরভাবে আহত হন জামাইবাবু শৈলেন রায়। ফোন মারফত শৈলেন রায়ের সাথে যোগাযোগ হলেও নিখোঁজ ছিলেন তরুণ। শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন থেকে তরুণের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছে দেওয়া হয় পরিবারকে। 

ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন তরুণের মা সুমিত্রা রায়। শনিবার তাঁকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাড়ি ফিরেই ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ফের তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। দুর্ঘটনায় মৃত তরুণ রায়ের বাবা নৃপেন রায় বলেন,”তরুণ বাড়িতে একমাত্র রোজগার করত। নিজে একটি ঘর তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিল। ঘরের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন হয়ে গিয়েছে। সামনের অগ্রহায়ণ মাসে ছোট বোনের বিয়ে। তার জন্যই সে কাজে গিয়েছিল। কিন্তু তার মাঝেই এই দুঃসংবাদ। এখন কীভাবে কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।” এই দুঃসময়ে দুর্গত পরিবারটির সর্বতোভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.